Pages

Saturday, April 7, 2018

মাননীয় নৌ পরিবহন মন্ত্রী মহোদয়


মাননীয় নৌ পরিবহন মন্ত্রী মহোদয়,
আপনি মাদারীপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্বে এবং কালকিনি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি। আপনার নিজের অবস্থান, আপনার মান-সন্মান, মর্যাদা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনার অবদান থেকে আমরা শিখেছি। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের অগ্রভাগে আপনাদের শিখানো শ্লোগানে মূখরিত করেছি আমরা।
আপনাদের প্রেরণা ও উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি আমরা। কেউ আপনার আত্মীয় নয়; কেউ আপনার পর নয়; সবাই আপনার নিকট সমান। আপনি আমাদের নেতা। আপনাকে আমরা মাদারীপুরবাসী আমাদের যোগ্য প্রতিনিধি, যোগ্য নেতা বলে শ্রদ্ধা করি, সন্মান করি; মিছিল করি, উল্লাস করি; আপনার আগমনে কালকিনি তে নব জোয়ার এসেছে।
ভারতে প্রশিক্ষণ দেয়া অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় নেই এবং এ মহান দায়িত্ব আপনার উপর। সে দায়িত্ব কি আপনি সঠিক ভাবে পালন করেছিলেন?
আপনি অন্যায় অবিচার করলে আমরা আর কার নিকট যাবো? সবাইতো আর নেত্রীর সাথে দেখা করতে পারেন না। আজ যারা কালকিনিতে কমান্ডার বলে খ্যাত, এদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা নয়; এমন কি আমার ইউনিয়ন বাঁশগাড়ীর সকল মুক্তিযোদ্ধাদের আমার চেয়ে তো অন্য কেউ বেশী চিনে না, জানে না; এখানে আসল মুক্তিযোদ্ধারা এমন কি ব্যারাকপুর মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কালীন কমান্ডার হানিফ মাহমুদ (নিউজিল্যান্ড প্রবাসী) এর নামও তালিকায় নেই, যিনি চাঁদপাড়া রিসিপশন ক্যাম্পের সহকারী ইন-চার্জ ছিলেন। হায়দার বেপারী, যিনি স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং ৭১ সালে চাঁদপাড়া ক্যাম্পের ইন-চার্জ মাদারীপুর-কালকিনি-৩ আসনের প্রথম এম পি (এম সি এ) বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এডঃ মতিউর রহমান (মতিভাই)র সাথে তাঁর বাসায় থাকতেন এবং ক্যাম্প অফিসের কাজ করতেন। তার দরখাস্তও আপনি গ্রহণ করেননি; বড় কষ্ট পেয়েছি; যারা মুক্তিযোদ্ধা নয়; তাদের সাথে আপনি হেসে কথা বললেন-গল্প করলেন, তাদের কাগজপত্র স্বাক্ষর করলেন আর যে আসল মুক্তিযোদ্ধা তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন; সে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেল; এ দুঃখজনক ঘটনা আপনার দ্বারা সংঘটিত হওয়ায় অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম এবং লাল বইতে আমার নাম না থাকা সত্বেও আমি কথা বলেছিলাম। ওদের সমর্থন করেছিলাম, আপনার মনে আছে হয়তো।
মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিশেষ করে যারা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করেছে এবং এখনো করছে, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা পাবে, তাও আবার আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাকালীন এবং আপনার মত মাদারীপুর কাঁপানো আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর সামান্য ভুলের কারনে? এটা ঠিক কিনা? আপনি নিজেই অনুধাবন করুন। আমরা আপনার সুবিবেচনা ও সুবিচারের প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে বসে থাকলাম।
তাছাড়া আঞ্চলিক সমস্যাগুলো নেত্রী সরাসরি না জেনে কিভাবে সমাধান করবেন? এ মহৎ কাজটি আপনাকেই করতে হবে। ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া আমার সহযোদ্ধা অনেকেই আর বেঁচে নেই; তাদের পরিবার বঞ্চিত হল মহান স্বাধীনতার ফসল থেকে। এ কাজ যারা করেছে, তারা তাদের ইচ্ছে মত অর্থ নিয়ে ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় লিখে দিয়েছে। যে সমস্যা মাদারীপুরের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কলুষিত করছে, সে সমস্যা কেন্দ্রীয়ভাবে সমাধান হবার নয়; যার যার জেলা উপজেলায়ই সমাধানযোগ্য।
আমার মুক্তিযোদ্ধা হবার সখ মিটে গেছে, কিন্তু ঐ হতভাগাদের কি হবে? যারা ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের নাম মূখে আনেনি, তারা ভাতা পাচ্ছে, তাদের সংসার ভালো চলছে, আর যারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে গেল, যুদ্ধ করলো তাদের নাম নেই; এ কলঙ্ক এ ব্যর্থতা যে কোনভাবেই হোক আওয়ামী লীগ সরকারের এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার উপরই বর্তায়। কারন, আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করেছিল।
আপনি আমাদের শেষ ভরসা-আপনার রিপোর্ট অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা হবে। মহান আল্লাহ্‌ যেনো আপনার দ্বারা কোন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের কলঙ্ক দিয়ে আপনার বাবা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন সহযোগি, আওয়ামী লীগের সংগঠক ও দুর্দিনের কান্ডারী মরহুম এডঃ আচমত আলী খানের সারা জীবনের কষ্ট, সাধনা, সাফল্য কলঙ্কিত না করে সে দোয়া করি; আপনি আরো উপরে যান; আল্লাহ্‌ আপনাকে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিতকরনে সহযোগিতা করুক।
আমিন ! ]
একটা জাতি কতটুকু দুর্ভাগা হলে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সকল আবেদন, নিবেদন ব্যর্থ হওয়ার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি বরাবরে আবেদন করতে হয়, এটা ভাবতে গেলে গা শিউরে ওঠে। ইচ্ছে হয়, রাষ্ট্রের কর্ণধারদের টুঁটি চেপে ধরে রাস্তায় টেনে এনে মিশিয়ে দেই ধুলোর সাথে; কিন্তু, বাস্তবে তা সম্ভব নয়। নষ্ট পূঁজিবাদী একটি রাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললে এখন টিটকারি, লাঞ্চনা-গঞ্জনা সইতে হয়, যদিও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, কিছু রায়ও হয়েছে, কিছু রায় কার্যকরও হয়েছে। কিন্তু, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আদৌ কোথাও সন্মানিত হচ্ছে কি, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় একটি মরণোত্তর রাষ্ট্রিয় গার্ড অব অনার পাওয়া ছাড়া, আমার জানা নেই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নয়, অথবা কোন আমলা নয় এমন সাধারন মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে আজ পর্যন্ত্য রাষ্ট্রের কোন একটি স্থাপনার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন বা উদ্বোধন করানোর মাধ্যমে সন্মান জানানো হয়েছে কি? ব্যক্তি বা সমাজের কিছু লোকের উদ্যোগে কোন মুক্তিযোদ্ধার নামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কোন লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হলে সেই প্রতিষ্ঠানটিকে আলাদাভাবে একটু বেশি সুবিধা দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সন্মানিত করার কোন অনুরোধ কোন মহল থেকে করা হলেও মি. বিধি-বিধানের অদৃশ্য সূতোর টানে প্রতিষ্ঠানটিই অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে এ নজির বহু আছে, ফরিদপুর অঞ্চলে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কথা এ মূহুর্তে মনে পড়ছে, “মৃগী শহীদ দিয়ানত কলেজ”; যেটির অস্তিত্ব সঙ্কটকালে সে সময়কার কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা হিসেবে কিছুটা সহায়তা করেছিলাম, ছাত্র জীবনের বন্ধু তৎকালীন কলেজ অধ্যক্ষের কাছে সব জেনে।
মাদারীপুর জেলার (সাবেক ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার) কালকিনি উপজেলার (সাবেক কালকিনি থানার) বীর মুক্তিযোদ্ধা মালদ্বীপ প্রবাসী “মোক্তেল হোসেন মুক্তি”র গত কয়েকদিনের কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাস ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাষ্ট্র কত হীনভাবে অপমান করছে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ওনার কিছু স্ট্যাটাস এতোই হৃদয়বিদারক যে, তা জনসমক্ষে প্রকাশযোগ্য নয়, তরুণরা ক্ষিপ্ত হয়ে এসবের কুশীলব নষ্টদের মান-সন্মানে আঘাত করে বসতে পারে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের কর্ণধারদের আগে অনেক কিছুই জনাতাম; অধিকাংশই সমাধান না হলেও, কিছু হতো। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, ততই হতাশ হয়ে পড়ছি। এক কুখ্যাত রাজাকার পুত্রের অনুরোধে আমার খুব কাছে থেকে দেখা এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ না দিতে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র উন্মুখ হয়ে লড়েছে, দেখেছি চোখে ঠুলি পরে।
যদিও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যারা এ পর্যন্ত্য দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা সকলেই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলেই ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু, এসব মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আমলেই অনেক কুখ্যাত রাজাকার ও রাজাকার পুত্ররা “মুক্তিযোদ্ধা সনদ” পেয়ে গেছেন অনেক চুপিসারে বিদ্যুৎ গতিতে, রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্ণধারেরা নিজেরাই এদের ফাইল বগলদাবা করে নিয়ে ছুটেছেন এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে। কিন্তু, “মুক্তিযোদ্ধা সনদ” পেতে বয়োবৃদ্ধ, রোগে শোকে কাতর, অনাহারে-অর্ধাহারে জর্জরিত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে তার সনদ পেতে ঘুরতে ঘুরতে স্যান্ডেলের তলা ক্ষয় হয়েছে, ঘাটে ঘাটে (দপ্তরে, দপ্তরে, টেবিলে টেবিলে) তাকে ষ্টেটম্যান্ট দিতে হয়েছে যেমনটি দিতে হয় একজন দাগী আসামীর “জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল” এর সন্মূখীন হয়ে অপরাধ স্বীকার না করার চেষ্টাকালে। আর এসব মুক্তিযোদ্ধাকে এসব দপ্তরে কখনো সন্মানের সাথে একটু বসতে বলা হয়েছে, এমন কখনো শুনিনি। গত কয়েক মাস যাবৎ শুরু হয়েছে আরেক তেলেসমাতি কান্ড-কারখানা “মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি”র সন্মূখে আবেদনটি পৌছাতে নাকি টাকা দিতে হয়, হরহামেশাই এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলিতে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে তথ্যটি আসছে পত্রিকায় কিছু উপজেলায় নাকি “মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি”তে অর্ন্তভূক্ত হয়ে আছেন কুখ্যাত রাজাকারও।
উল্লেখিত ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তির আরো কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাসে কিছু হৃদয় বিদারক হাহাকার ও ক্ষোভ ঝরে পড়েছে, যেগুলির সারমর্ম হলো, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্রের সাথে ন্যাক্কারজনকভাবে জড়িত পবিত্র সংসদ ভবনে চিৎকার করে খুনী কনফেডারেশন জিয়াকে “বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক” দাবী করা সুবিদ আলী ভূইয়ার ইন্ধনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে মন্ত্রীর কক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব লাঞ্চিত করেছেন। এটা জাতির জন্য উদ্বেগজনক, খোন্দকার মোশতাকের উকিল জামাই সুবিদ আলী যখন গোটা জাতির ধিক্কার ও ঘৃণায় লুকিয়ে থাকে, তখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর কক্ষে সে ঢোকে কি করে? নাকি মাননীয় মন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের কথা শোনেননি? তিনি কি শোনেননি জঙ্গিদের মদদদাতাদের কথা যারা আজ বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ধ্বংস করে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে? মাননীয় মন্ত্রী কি শোনেননি কে, এম ওবায়দুর রহমান, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেমদের নাম, বা জানেন না এদের পূর্ব পরিচয়? তিনি তো দুধের শিশু নন। মাননীয় মন্ত্রী নিজে শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা শুধু নন, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রকাশ্য ও গোপন প্রস্তুতির সংগঠকও। পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে গোটা জাতি যুদ্ধ শুরু করার বেশ আগেই যে তিনি একটি অতি সাহসী বীরত্বসূচক কাজ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তিনি কি সেটা ভূলে গেছেন?
মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাোম্মেল হক এর দৈনিক ভোরের কাগজ ১৯ মার্চ, ২০১৬ তে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ ১৯শে মার্চ ১৯৭১” শিরোনামের একটা লেখায় উল্লেখ রয়েছে, ৭ মার্চে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সম্ভবত ১১ মার্চ গাজীপুর সমরাস্ত্র কারখানা (অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি) আক্রমণ করি। গেটে বাধা দিলে আমি হাজার হাজার মানুষের সামনে টেবিলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছি মাইকে। পাকিস্তানিদের বুঝতে পারার জন্য ইংরেজিতে বলি ‘I do hereby dismiss Brigadier Karimullah from the directorship of Pakistan Ordnance Factory and do hereby appoint Administrative officer Mr Abudul Qader (বাঙ্গালী) as the director of the ordnance Factory’ এ গর্জনে সত্যি কাজ হয়েছিল। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার বক্তৃতা চলার সময়ই পেছনের গেইট দিয়ে সালনা হয়ে পালিয়ে ঢাকা চলে আসেন। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার আর পরবর্তী সময় ১৫ এপ্রিলের আগে গাজীপুরে যায়নি। পাকিস্তান সমরাস্ত্র কারখানা ২৭ মার্চ পর্যন্ত আমাদের দখলেই ছিল।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে বিনীতভাবে জিগ্যেস করতে চাই, এমন সাহসী ভূমিকা কি ১১ই মার্চ ১৯৭১ এ কি আপনার একাই ছিলো, নাকি মোক্তেল হোসেন মুক্তিদের মতো সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরই ছিলো? কিভাবে ২০১৬ সালে পাকিস্তানের এজেন্ট খুনী জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবীকারি সুবিদ আলী আপনার উপস্থিতিতে আপনার কক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তিকে অপমান করার ঔদ্ধত্য দেখায়? আর সচিব কি প্রজাতন্ত্রের মালিক না কর্মচারি না সেবক? আপনি সচিবের অধীন, নাকি সচিব আপনার অধীন? এসব প্রশ্নগুলি নিজের বিবেককে করুন মাননীয় মন্ত্রী।
দেশবাসীর বিবেক জাগ্রত হোক: আমি দেশবাসী, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণদের বিবেকের উদ্দেশ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তির দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাস উল্লেখ করতে চাই। সাথে এও বলতে চাই, যদি উনি মুক্তিযোদ্ধা নাই হবেন, তবে প্রকাশ্যে জনসমক্ষে এ দাবীটি তুলতে পারতেন না। যারা ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তারা এ সনদ পায় গোপনে টাকার থলি দিয়ে কিনে আর এ সনদ ব্যবহার করে টাকার বস্তা কামায়। তাই, আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য যে, উনি আসলেই একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার হাহাকার আমার কাছে আজ পঙ্গু হয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌরসভায় ভাড়া বাসায় যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা ১৯৭২ সালে সনদ পেয়েও ১৯৭৪ সালে ছিড়ে ফেলার পর বারবার চেষ্টা করেও নতুন সনদ না পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম এর হাহাকারের মতোই মনে হয়েছে।


মোক্তেল হোসেন মুক্তির ১৭.৫.২০১৭ তারিখ বিকাল ২.৩৮ এর ফেসবুক স্ট্যাটাস: “আমাকে আমার মাওলা ছাড়া আর আমার মা বাবা ছাড়া কেউ বোঝেনি, কেউ না। আমার চেয়ে দলকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধ কে কারা কিভাবে বেশী ভালোবাসতে পারে আমার জানা নেই। আমার অস্তিত্ব না থাকলে আমি কারো অস্তিত্ব নিয়ে ভাববো কেন? এখানে ক্ষমার প্রশ্ন নয়; এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রশ্ন। যে মেজর সুবিদ আলী ভুঁইয়া বলতে পারে যে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক সে সুবিদ আলীর কথায় মন্ত্রী আমাকে অপমান করতে পারে না। আমার গান হাতে থাকলে ঐ খানেই কিসসা খতম করে দিতাম সুবিদ আলীর। আমি আর মুক্তিযোদ্ধা হতে চাই না। এবার হবো সন্ত্রাসী। মরার আগে যে ক’দিন বাচি, আওয়ামী লীগের সবাই যেনো আমাকে জুতা মারে, থু থু নিক্ষেপ করে এবং শেষ শব্দটি উচ্চারন যে "Moktel Hossain Mukthi was a great rajakar in 1971.” সবাই মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে গবেষনা করে। কেউ কেউ নাম ভাঙ্গিয়ে খায়, ব্যবসা করে; বড় বড় লম্বা বক্তৃতায় মাইক ফাটিয়ে দেয়; অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সারা দেশে অবৈধ ব্যবসা চলছে; মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব মারধর করছে, মন্ত্রী অপমান করছে, তার কোন প্রতিবাদ হয় না; কার চরিত্র ভালো? ফেসবুকের চরিত্র আরও জঘন্য; আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগি অনলাইনের সে সোনার ছেলেরা কোথায়? আজ গা' জ্বলে না? আপনার বাবা যদি মুক্তিযোদ্ধা হত, আর মন্ত্রী অপমান করতো আপনি কি করতেন? আমার কোন ছেলে নেই, তাই কেউ আমার পাশে এসে দাড়ালেন না? ভালো থাকুন সবাই।

প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলঃ দেশবাসী রুখে দাঁড়াও ৭১ এর মতোই

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলঃ দেশবাসী রুখে দাঁড়াও ৭১ এর মতোই মোজাম্মেল সুবিদ আলীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলঃ দেশবাসী রুখে দাঁড়াও ৭১ এর মতোই মোজাম্মেল সুবিদ আলীদের বিরুদ্ধে 
 
২ লক্ষ ৭০ হাজার মা'বোনের ইজ্জত আর ৩০ লক্ষ শহীদের তাজা রক্তে কেনা মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখার প্রশ্নে আর একটা যুদ্ধ হবে, সে যুদ্ধে স্থানীয় ৭১ এর পরাজিত পাকি ঘাতক দালাল ও দালালের বংশধর দুটোকেই পরাজিত করতে হবে। 
১৯৭১ এ স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া বাঙ্গালী জাতির কোন পথ খোলা ছিলনা। জাতিরজনক অনেক চেষ্টা করেছিলেন সকল বৈষম্য দূরীকরনের এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে অখন্ড পাকিস্তানকে টিকিয়ে রেখে ৬ দফা ও ১১ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে অনেক সভা সমাবেশ আলাপ আলোচনা চালিয়েছিলেন কিন্তু ওরা সেটা চায়নি উপরন্তু বাঙ্গালীর উপর রাতের আধারে অতর্কিতে ২৫শে মার্চ গুলি করে হত্যা করেছিল হাজার হাজার বাঙ্গালী পুলিশ ও ই পি আর এর সদস্যদের। জাতিরজনকের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনাও খালেদার সাথে ঠিক একই ভাবে অত্যন্ত বিচক্ষনতার সাথে সমঝোতা করার আপ্রান চেষ্টা করেছেন, অনেক ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু মূর্খ খালেদা সেই ইয়াহিয়া আর ভূট্টোর কুট কৌশলের পুনঃপ্রয়োগ করে এটাই প্রমান করল যে হ্যাঁ, খালেদা ৭১ এর ঘাতক দালালদের ই একজন প্রতিনিধি। এখন কি করা উচিত, তা' বর্তমান প্রজন্মের নাগরিকরাই সিদ্ধান্ত নেবে। "দেশ কি আবার পুনঃ সেই পশ্চিমা শোষকের হাতে ছেড়ে দেবে নাকি ২ লক্ষ ৭০ হাজার মা'বোনের ইজ্জত আর ৩০ লক্ষ শহীদের তাজা খুনের মর্যাদা দিতে এগিয়ে আসবে? স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে কোন সরকার দ্বারা যে উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি, শেখ হাসিনার সরকার মাত্র ৫ বছরে তার চেয়ে ৪ গুন উন্নয়ন করে দেশকে আজ দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম ধনি দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আজ তাই হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছে বাঙ্গালী জাতির পুরনো শত্রু পাকিস্তান। ওরা ৭১ এর বদলা নিতে চায় জংগিবাদের আবাদ করে।
সে ৭১ ঘাতক দালালের বংশধর শিবিরকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আই এস আই উইংস কমান্ডো প্রশিক্ষন দিয়ে বাংলাকে বিধস্থ করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ১৭ হাজার ক্যাডারকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়েছে। এদের সাথে অনেক পাকিস্তানী জঙ্গিরাও গোপনে যোগ দিয়েছে। শাহবাগ কাটাবন মসজিদ থেকে দু’জন পাকিস্তানী জঙ্গি গ্রেফতার হওয়ার কারনে অনেক গোপন তথ্যই বেড়িয়ে আসছে। 📷৭১ র শকুনের কালো হাত ভেঙ্গে দেবার দীপ্ত শপথে, সুদৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আজ আবার ৭১ এর মতোই গর্জে উঠার সময় এসেছে। সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সোনার বাংলা রাজাকারমুক্ত করার লক্ষ্যে আবারও শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসাতেই হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সুখি সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ “রূপকল্প ২০৪১” বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী প্রজন্মের সোনালী ভবিষ্যত গড়ার একান্ত প্রয়োজনে নৌকার কোন বিকল্প নেই। নৌকায় ভোট দিতেই হবে, নইলে বাঙ্গালীর পরিচয় ভুলে যেতে হবে। ফিরে যেতে হবে সেই ভয়াবহ স্বৈরাচারী পশ্চিমা শোষকের যুগে। ফিরে যেতে হবে হাওয়া ভবনের সন্ত্রাস আর দুর্বৃত্ত্বের দুঃশাসনের নির্যাতন লুন্ঠনের যুগে। ঘরের বাড়ন্ত যুবতি কন্যার জীবন হয়ে উঠবে বিভীষিকাময়। হবে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের উত্থান। লাশ হবে স্কুল কলেজে পড়ুয়া আগামী প্রজন্ম। মাঝ পথে থেমে যাবে শেখ হাসিনার উন্নয়নের দুর্বার গতি। দেশ যাবে আবার ১০০ বছর পিছনে। বিশ্বের কাছে আবারও আমাদের পরিচয় দিতে হবে দরিদ্র্য ভিক্ষুক জাতি হিসেবে। যা’ বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ঘুচিয়ে দিয়েছে ব্যাপকতর উন্নয়নের মাধ্যমে।
আর একটি কথাঃ মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই বলেন না যে “আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম”। কেউ বলেন কেউ বলেন না। আমি মাইক নিয়ে বলে বেড়াই "আমি মুক্তিযোদ্ধা কারন যে বয়সে যুদ্ধে গিয়েছি সেটি একজন যোদ্ধার বয়স ছিল না। সেটিকে বাৎসল্য বা ছেলেখেলা মনে করা যায়। ১৬ বছর বয়সে বাড়ীতে না বলে সংসারের ৬ ভাইয়ের সবচে' ছোট ছেলেটি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য মুজিবনগরে যেতে পারে এটা ভাবা যায়না।" এর মূলেই ছিল অগাধ দেশপ্রেম। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির জনক থেকে শূরু করে ৭২ এর মন্ত্রী পরিষদের কেউ ছিলেন না যাদের সাথে আমি পরিচিত ছিলাম না। আমি যুদ্ধ দেখেছি নিজের চোখে, আমি ৭৫ এর রক্তের বন্যা দেখেছি নিজের চোখে। ২০০১ এক থেকে বি এন পি জামাত জোট সরকারের নির্যাতন লুন্ঠন দুর্নীতি দেখেছি নিজের চোখে। ক্ষুদ্র আমি অতি নগণ্য, যা'বুঝি, যেটূকু জানি তাই চরম সত্য দিবালোকের মতোই মানি। মাঝে মাঝে বাঙ্গালী জাতির উপর আমি ক্ষেপে যাই, আপনারা অনুভব করবেন হয়তো, কেন মুক্তি হঠাৎ করে মাঝে মধ্যেই উল্টা পালটা কথা বলে? আসলেই তাই, মাঝে মধ্যেই ঘুমের ঘোরে কেঁদে উঠি, কেন তা' জানি না, তবে সে ওই ১৫ই আগষ্টের কারনে এটা পরিস্কার বুঝতে পারি। এ সোনার মানুষটির জন্ম না হলে স্বাধীনতার প্রশ্নই উঠতো না। বঙ্গবন্ধু না হলে কার বজ্রকন্ঠের উদাত্ত আহবানে এই ঘুমন্ত বাঙ্গালী জাতি জেগে উঠতো? কেউ কি ছিলেন “ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার সুস্পষ্ট তাগিদ দেবার?”

কেউ কি ছিলেন তোমাদের "যা'কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে" বাংগালী জাতির অভিভাবক হিসেবে এমন পিতৃসূলভ নির্দেশ দানের? । কিন্তু আজকের এই জঙ্গিবাদী ভন্ড ইসলামের নামে মানুষ হত্যাকারী মৌলবাদীদের পেয়ারে দোস্ত বাংলার দ্বিতীয় মীর জাফর খন্দকার মোস্তাক আর তাহের উদ্দিন ঠাকুর গং রা আজো এই বাঙ্গালী জাতিকে পশ্চিম পাকিস্তানের গোলাম হিসেবে পা'চাটা ক্রীতদাস হিসেবেই গৃহবন্দী করে রাখতো যদি সেদিন তাজুদ্দিন আহমেদ হাল না ধরতেন। ইতিহাস কথা বলে। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি, আমি তাজুদ্দিনকে দেখেছি, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেখেছি। আমি বাঙ্গালী জাতির কালের ইতিহাসের পাতার কোন এক পৃষ্ঠার ছোট্ট একটি অক্ষর "মুক্তি" “সব কথার শেষ কথা, বাঁচাতে নিজের মাথা, স্ত্রী পুত্র বন্ধু ভ্রাতা গর্জে ওঠো, যথা তথা” প্রত্যেক ঘরে ঘরে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে মহল্লায় ইউনিয়নে, পথে কিংবা প্রান্তরে, মাঠে ঘাটে, এখানে সেখানে । রুখে দাঁড়াও, জঙ্গিরা যেখানে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযোদ্ধা কণ্ঠশিল্পী মোকতেল হোসেন মুক্তি, সভাপতি, সময়'৭১ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মালদ্বীপ আওয়ামী লীগ। সহ সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটি বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগ

শাইখ সিরাজ : রক্তচোষা এক প্রাণির নাম

শাইখ সিরাজ : রক্তচোষা এক প্রাণির নাম
শাইখ সিরাজ : রক্তচোষা এক প্রাণির নাম
সৈয়দ নাজাত হোসেন | আপডেট: ০৯:২৮ অপরাহ্ণ, ১৯ আগস্ট ২০১৫, বুধবার
একটি টেলিভিশন চ্যানেল একজন মানুষকে কি ব্যাপকভাবে পরিচিত করাতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণই হচ্ছেন চ্যানেল আই-এর বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। দেশের এমন কোনো জেলা-উপজেলা নেই, যেখানে কেউ তাকে চেনেন না। শুধু দেশেই নয়,বিদেশেও তার অনেক পরিচিতি। অথচ সত্যিকার অর্থে প্রকৃত মানুষরূপী এই প্রাণীটি যে সত্যিকার অর্থে কোন চরিত্রের, তা বোঝা দুস্কর। দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষক,শ্রমিক,খেটে খাওয়া মানুষ যদি তার প্রকৃত গুণাবলী সম্পর্কে বুঝতেন কিংবা জানতে পারতেন, তাহলে বিস্মিত না হয়ে পারতেন না। অন্তত একথা জোড় দিয়ে বলা যায় ।
একজন মা তাঁর গর্ভে সন্তান ধারণের সময় সেই সন্তানটি কেমন হবে, তা যেমন আগেই বোঝার কথা নয়, ঠিক তেমনি দুর্লভ প্রাণী এই শাইখ সিরাজ সম্পর্কেও কেউই তা জানেন না । বহুরূপী এই প্রাণিটির চরিত্র শান্তিপ্রিয় কোন মানুষের সাথেই মেলে না । অথচ সর্বস্তরের মানুষ জানেন, কতোইনা গুণাবলীর আধিকারী এই প্রাণিটি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যে, কৃত্রিম,নাটকীয় এবং ভণ্ডামীতে ভরপুর।
চ্যানেল আই তার যাত্রা শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সংবাদ প্রচার কার্যক্রম শুরু করে। আমার বিশিষ্ট বন্ধু বাংলাদেশ প্রেস ইন্সষ্টিটিউটের বর্তমান মহাপরিচালক শাহ্ আলমগীর সে সময় চ্যানেল আই সংবাদের মূল দায়িত্বে ছিলেন। কাগজে-কলমে তিনি বার্তা প্রধান না হলেও তারই নির্দেশে পরিচালিত হতো চ্যানেল আই সংবাদ। শুধু নামেই বার্তা প্রধান ছিলেন দুর্লভ প্রাণী এই শাইখ সিরাজ।
শাহ্ আলমগীরের অনুরোধেই ‘চ্যানেল আই-তে জড়িত হই । প্রথমে টাকা-পয়সার কোন নাম-গন্ধও ছিলো না। এভাবে প্রায় ১ বছর অতিবাহিত হবার পর যখন টাকা-পয়সার কথা ওঠে, তখন জানানো হলো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিয়োগ এবং টাকা দেয়া হবে। এভাবে আরও প্রায় এক বছর অতিবাহিত হবার পর রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, যশোর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, চাঁদপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ‘জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। যে নিয়োগপত্রটি দেয়া হয়েছিলো, তাও ছিলো দুর্লভ। পৃথিবীর কোন দপ্তর থেকে এমন নিয়োগপত্র কাউকে দেয়া হয় কি না, তা জানা নেই। যে নিয়োগপত্রটি দেয়া হয়েছিল, তা ছিল ছোট্ট একটি চিঠি। যাতে বলা হয়েছিলো-অমুক জেলার জন্য আপনাকে নিয়োগ দেয়া হলো,ব্যাস। আর এতে স্বাক্ষর করেছিলেন বার্তা প্রধান হিসেবে দুর্লভ প্রাণী এই শাইখ সিরাজই।
নিয়োগপত্রটি এমনভাবে করা হয়েছিলো যে,যেন কেউ কোনদিন বিজ্ঞ আদালতের আশ্রয় নিতে না পারেন। প্রথমে বেতন ধরা হয়েছিলো কেউ ২ হাজার, আবার কেউবা দেড় হাজার টাকা । এভাবে প্রায় ৩ বছর অতিবাহিত হবার পর বিভাগীয় শহরে বাস করা প্রতিনিধিদের বেতন বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৫ হাজার, কেউ ২ হাজার, আবার কেউবা সেই দেড় হাজার টাকাই। আমার বেতন দেড় হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছিলো ২ হাজার টাকা।
নাই মামার চাইতে যেহেতু কানা মামাই ভালো, সেহেতু বিষয়টি মেনে নিয়েছিলাম। এভাবে প্রায় ১০ বছর বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে, এটা-ওটা বলে সময় অতিবাহিত করার পরও যখন বেতন বাড়ার আর কোনো সম্ভাবনাই দেখছিলাম না, তখন ‘পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। কেননা, মনে হয়েছিলো,একজন পদত্যাগ করলে হয়তোবা কর্তৃপক্ষের কিছুটা হলেও টনক নড়বে, খুলবে সবার কপাল। কিন্তু না, সেই সুন্দর স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেছে। বাস্তবতায় এর কোনো প্রতিফলই ঘটেনি।
নতুন নতুন টিভি চ্যানেলগুলো শুরুতেই যেখানে জেলা প্রতিনিধিদের একটি বৈধ নিয়োগপত্র দিচ্ছে, সেখানে ‘চ্যানেল আই দেবেনা কেনো? পুরোনো চ্যানেল হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন যেখানে লক্ষ, লক্ষ টাকা কামাই করছে, ঢাকায় কর্মরত সর্বস্তরের স্টাফদের বছর বছর বেতন-বোনাস দিচ্ছে, তাহলে জেলা প্রতিনিধিদের দেবে না কেনো?
আমার ধারণা, জেলা প্রতিনিধিদের এতোদিনের সব টাকা দুর্লভ প্রাণী এই শাইখ সিরাজ ও তার সহযোগী মালিকেরা মৃত্যুর পর গোরস্থানে সঙ্গে নিয়ে যাবেন? তা না হলে পরিশ্রমের এই পারিশ্রমিক তারা পরিশোধ করবেন না কেনো?
১৯শে জুন ২০১১ ঘৃনায় একটি ব্যাখ্যাসহ রেজিঃ ডাকে ‘পদত্যাগপত্রটি চ্যানেল আই কার্যালয়ে পাঠাই। যার অনুলিপি দেই চ্যানেলটির সব মালিকসহ প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর। উদ্দেশ্য একটাই, যদি বেতন বাড়ানো হয়! কিন্তু না, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এতে কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি, হয়নি খোদ মালিকদেরও। কী বিচিত্র মানসিকতার অধিকারী এইসব দোকানদার টিভি চ্যানেল মালিকদের?
সে সময় কে বা কারা যেনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক-এ আমার ‘পদত্যাগপত্রটি প্রকাশ করে দেয়। কদিনের মধ্যেই সারাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ই-মেইল, ফেসবুক আর মোবাইলে এক ধরনের ঝড় ওঠে। চারিদিকে ধন্যবাদের বন্যা বইতে শুরু করে। এই ‘পদত্যাগ নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি। একদিন সন্ধ্যায় এক স্টলে বসে স্থানীয় কজন সাংবাদিকসহ চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ মোবাইলটি বেজে উঠলো। ধরলাম। অন্য প্রান্ত থেকে বলা হলো-
ঃ নাজাত ভাই বলছেন ? ঃ বলছি। ঃ আপনি এখন কোথায় ? ঃ কে বলছেন ? ঃ প্লিজ, বলুন না, আপনি কোথায় ? কী করছেন ? ঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে। স্টলে বসে চা খাচিছ। ঃ আপনার ছোট ভাই মঞ্জুরুল আলম পান্না। একুশে টেলিভিশন থেকে বলছি। পান্নার সাথে অদ্যাবধী সাক্ষাৎ না হলেও নামে তাকে চিনতাম। দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও তখন প্রচুর রিপোর্ট করতো। টেলিভিশনে দেখতে দেখতেই ওকে চেনা। ঃ কী খবর পান্না ? ঃ ভাই, আপনার যে কোনো একটা পা একটু উপরে তুলুনতো। ঃ ঠিক বুঝলাম না ! ঃ আপনার পা-টা একটু সামনের দিকে এগিয়ে দিন। ঃ কেন ? ঃ আহ্ ! পা-টা একটু উঁচু করুনই না …….. অনিচ্ছা সত্ত্বেও পা না তুলেই বললাম- ঃ হ্যাঁ, ডান পা-টা তুললাম। এখন কী করতে হবে ? ঃ কিচ্ছু করতে হবে না বস্ । মনে মনে আপনার পায়ের ধুলো নিলাম। ঃ কী সব বলছেন ? ঃ ঠিকই বলছি বস। ফেসবুক-এ ব্যাখ্যাসহ আপনার পদত্যাগপত্রটি পড়লাম। বাপের ব্যাটার মতো কাজ করেছেন। আপনাকে স্যালুট। অনেক সিনিয়র সাংবাদিকও একই ধরনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এইসব সাংবাদিকদের লজ্জার হাত থেকে রক্ষার জন্যই তাদের নাম আর প্রকাশ করলাম না। কেননা, দুর্লভ প্রাণী শাইখ সিরাজের সাথে এদের দেখা হলে এরা লজ্জা পাবেন ভেবে। শুধু দেশ-বিদেশ থেকেই নয়, ইউনিয়ন পর্যায় থেকেও অনেক সাংবাদিক বন্ধু সে সময় ফোন করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন । তারা দুর্লভ প্রাণী সম্পর্কে নানা ধরনের মন্তব্যও করেছেন। যা প্রকাশ করাও লজ্জাস্কর। অর্থাৎ তৃণমূল পর্যায়ের সাংবাদিকরাও এই দুর্লভ প্রাণীর প্রকৃত চরিত্র সম্পর্কে বেশ অবগত। যা আগে নিজেও জানতাম না। সত্তর দশকে প্রচুর লেখালেখি করেছি । দেশের এমন কোন পত্র-পত্রিকা তখন ছিলোনা, যেখানে আমার লেখা প্রকাশিত হয়নি । টেলিভিশন ও রেডিওর বিভিন্ন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানেও অনেক পান্ডুলিপি লিখেছি,করেছি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্হাপনা । নাটক,গান আরও কতো কী? চ্যানেল আই-এর ব্যবস্হপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরও তখন প্রচুর লেখালেখি করতেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ‘খাবার-দাবার নামে তার একটি রেস্টুরেন্ট ছিলো। যা এখনও আছে । সেই রেস্টুরেন্টে দুর্লভ প্রাণী এই শাইখ সিরাজকেও দেখেছি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে। অথচ ‘চ্যানেল আই শুরুর পর এই প্রাণীটি বার্তা প্রধান হিসেবে নিজের নামটি যুক্ত করে নিয়ে রাতারাতি হয়ে যান বি-রা-ট সাংবাদিক। বন্ধু হিসেবে সাগর ভাই-ই যে তাকে এই উপহারটি দান করেছেন, যা সংশ্লিষ্ট সবাই অবগত । যতোদূর জানা যায়,এই প্রাণীটি কোনদিনও কোনো ত্রৈমাসিক, মাসিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক কিংবা কোনো দৈনিক পত্রিকায় একজন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন নি। তবে হ্যাঁ, সে সময় এই দুর্লভ প্রাণীটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত কৃষি বিষয়ক ২০ মিনিটের এক অনুষ্ঠান ‘মাটি ও মানুষ উপস্থাপনা করতেন। কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা, আর সাংবাদিকতা কি এক? তাহলে উনি কিসের সাংবাদিক? নাকি, শিল্পপতি ব্যবাসয়ীরা এখন যেমন টিভি চ্যানেলের দোকান খুলে সচিবালয়ে ঢোকার এক্রিডিটেনশন কার্ড নিয়ে সাংবাদিক হচ্ছেন, ঠিক সেই রকম বার্তা প্রধান? চ্যানেল আই থেকে পদত্যাগ করায় সে সময় অবশ্য একটা বড় লাভ হয়েছিলো।আর সেটা হলো, আমরা যারা ৫ হাজার, ২ হাজার এবং দেড় হাজার টাকার সাংবাদিক ছিলাম, দুর্লভ এই প্রাণী শাইখ সিরাজ আমার ‘পদত্যাগপত্র পাওয়ার পর ২৩ জেলায় পয়সা ছাড়া কর্মরত জেলা প্রতিনিধিদের দেড় হাজার টাকা করে বেতন দেয়া শুরু করেন। এমন কি, ফুটেজ বিল বাবদ সব প্রতিনিধিকে ১শ/ দেড়শ টাকা করে নিয়মিত দেয়াও শুরু করেন । কষ্ট হয় এই ভেবে যে, যে ১১ জন একসাথে ‘নিয়োগ পেয়েছিলাম, তাদের কেউ কেউ এখনও সেই দেড় হাজার টাকাই বেতন পান জেনে। এটা কোন কথা হলো? বিবেক বলে কী কিছুই নেই এইসব বিত্তশালী প্রাণীদের? এরা কী মানুষ, নাকি পশুর প্রকৃত গুণাবলির চাইতেও নিকৃষ্ট? আগে প্রতি বছর দেশের সব ‘জেলা প্রতিনিধিদের একবার ঢাকায় ডাকা হতো। উদ্দেশ্য, মত বিনিময় করার নামে প্রতিনিধিদের ঝালাই করা। সবাই ঠিক আছে কী না তা যাচাই করা এবং নিজেদের স্বার্থে কিভাবে তাড়াতাড়ি সংবাদ পাঠাতে হবে, সে সংক্রান্ত বিষয়ে টেকনিক্যাল ধ্যান-ধারণা দিতে। আলোচনা শেষে দুপুরের খাবার একসাথে খেয়ে প্রত্যেককে ১ হাজার টাকার ১টি খাম ধরিয়ে দিয়ে ছেড়ে দেয়া হতো। অর্থাৎ যাতায়াত খরচ।টেকনাফ-তেতুলিয়া থেকে যিনি এসেছেন, তার যাতায়াত খরচ যেমন ১ হাজার টাকা, তেমনি মানিকগঞ্জ-গাজীপুর থেকে যিনি এসেছেন, তারও সেই ১ হাজার টাকাই যাতাযাত খরচ । আলোচনা শেষে বলা হতো, ‘খুব শিগগীরই বেতন বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আমার পদত্যাগের পর ‘চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ আর কোন মতবিনিময় সভা করেন নি। এ কারণে ৬৩ জেলার অধিকাংশ ‘জেলা প্রতিনিধিই মোবাইল করে আমাকে অভিযুক্ত করতেন। বলতেন- ঃ আপনার কারণেই আমাদের আর ঢাকায় ডাকা হয় না। ঃ আমি আবার কী করলাম ? ঃ বেতন-ভাতা নিয়ে আপনার মতো কেউ যদি আবারও প্রশ্ন তোলেন, সে কারণেই আর ডাকা হয় না। ঃ আমার দাবিগুলো কী অযৌক্তিক ছিলো ? ঃ ভালো করতে গিয়ে সবার ক্ষতি করেছেন আপনি। আমাদের আর কোনেদিনও ডাকা হবে না। জেলা প্রতিনিধিদের চমকে দিয়ে দীর্ঘদিন পর গত ১৫ই নভেম্বর ২০১৪ ‘চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ একদিনের এক কর্মশালার নামে ৬৩ জেলার ‘জেলা প্রতিনিধিদের ঢাকায় ডেকেছিলেন। কর্মশালার শুরুতেই জনৈক জেলা প্রতিনিধি বেতন-ভাতা নিয়ে কথা তুলতেই দুর্লভ প্রাণী এই শাইখ সিরাজ সেই প্রতিনিধিকে থামিয়ে দেন এবং আগামীতে আবারও ডাকার আগেই বেতন বাড়িয়ে দেয়ার সেই পুরনো আশ্বাস দেন। কী বিচিত্র মানসিকতা এদের ? সাংবাদিক নামধারী এইসব জেলা প্রতিনিধিরা কর্মশালায় নিশ্চুপ বসে থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে সেই ১ হাজার টাকা যাতায়াত খরচ নিয়ে বাড়ি ফেরেন । তবে হ্যাঁ, চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ এবার ব্যতিক্রম যা করেছেন, তাও দুর্লভ। কর্তৃপক্ষ এই শীতে এবার প্রত্যেক প্রতিনিধিকে একটি করে কমপ্লিট ড্রেসের ‘পিচ দিয়েছেন। আর এই কমপ্লিট বানাতে সেলাই খরচ বহন করতে হয়েছে প্রত্যেক প্রতিনিধিকেই। অবশ্য অনেকেই কমপ্লিট না বানিয়ে পিচ ফেলে রেখেছেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আমার ধারণা, দুর্লভ প্রাণী এই শাইখ সিরাজ নিশ্চয় বড় কোন টেক্সটাইল কোম্পানীর ত্রুটি খুঁজে বের করে মালিককে ভয় দেখিয়ে এই পিচ সংগ্রহ করেছেন এবং জেলা প্রতিনিধিদের বেতন না বাড়িয়ে খুশি করার জন্যই উপহার হিসেবে দান করেছেন। এটা চাঁদাবাজি, না অন্য কিছু, তা অবশ্য জানিনা । পদত্যাগ করার আগে কয়েকটি জেলার ঘনিষ্ঠ কজন প্রতিনিধির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছিলাম। মোট ১৪ জন এক সঙ্গে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত হলেও শেষপর্যন্ত দেখা যায় মোট ৬ জন পদত্যাগ করেছি । এরমধ্যে ১ জন আবার দুর্লভ প্রাণীর প্রেমে উন্মাদ হয়ে আবারও ফিরে যান চ্যানেল আইতে। হায়রে মফস্বল সাংবাদিকতা! হায়রে সাংবাদিকের চরিত্র। চ্যানেল আই ছিলো আমার কাছে অনেকটা নিজের সন্তানের মতো। প্রতিষ্ঠানটির কাছে আমি কৃতজ্ঞতও। কেননা, প্রত্যেক মাসে কম করে হলেও আমার ৫/৬টি প্যাকেজ রিপোর্ট প্রচারিত হতো। নিজের করা রিপোর্টে আমার অডিও এবং পিটিসিও থাকতো। সে কারণে দেশব্যাপী পরিচিতিও ঘটে ব্যাপক। বিদ্যুতের দাবীতে কানসাট যখন উত্তাল, বোমাবাজি, তীর ছোড়াছুড়ি, পুলিশের গুলি, লাশের পরে লাশ, তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে প্রথম যখন লাইভ রিপোর্ট করি, তখন সব চ্যানেলের মাথা খারাপ। প্রথম দিন সন্ধ্যে ৭টায় সংবাদটি সরাসরী প্রচারিত হবার পরদিন ভোরেই ঢাকার প্রায় সব চ্যানেলের রিপোর্টার কানসাটে এসে হাজির । ‘চ্যানেল আই থেকে এসেছিলেন মাহবুব মতিন। যিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই, জান্নাতবাসী হয়েছেন। সে সময় কানসাট নিয়ে প্রতিদিন দুটি করে সংবাদ প্রচারিত হতো। প্রথম লিড নিউজ করতেন মাহবুব মতিন, আর আমি সাইড ষ্টোরী, সেকেন্ড লিড হিসেবে। ১৫শ থেকে ৫ হাজার টাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গুলির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমরা করবো রিপোর্ট, আর দুর্লভপ্রাণী শাইখ সিরাজ গংরা কামাবেন অর্থ, তা কী হয়? নাকি হতে পারে ? আর হতে পারে না জন্যই দূর্লভ প্রাণীর মুখে ঘৃণা ছুড়ে মেরে স্বেচ্ছায় স্বপদ থেকে পদত্যাগ করি। পদত্যাগ করার পর সাগর ভাই একদিন ফোন করেছিলেন ।বলেছিলেন- ঃ তোমার ‘পদত্যাগপত্র পেয়েছি। ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে এটা গ্রহণ করলাম না। জলদী ঢাকায় এসে দেখা করো। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে পদত্যাগের ৮/১০ দিন পর ঢাকা গিয়ে একদিন সাগর ভাইকে ফোন করলাম। সাগর ভাই বললেন- সরাসরি অফিসে ঢোকার দরকার নেই। অফিসের কাছাকাছি এসে ফোন দিও। তাই করলাম। ৫/৬ মিনিট পর সাগর ভাই বললেন- ঃ অফিসে সিরাজ আছে, লোক পাঠালাম। ওদের সঙ্গে আসো। ৪/৫ মিনিট পর অপরিচিত ৩ জন এলেন। অনেকটা ‘গার্ড অব অনার করার মতো করেই ওরা ভেতরে নিয়ে গেলেন। পথে সাবেক কজন সহকর্মীর সঙ্গে দেখা হলো।এদের কেউ কেউ বিশেষ করে রিপোর্টার, ক্যামেরাম্যান, ভিডিও এডিটররা চোখের ইশারায় কি যেনো বললেন। মনে হলো তারা পদত্যাগের বিষয়টি জানেন। কেউবা পাশে এসে ফিসফিস করে বললেন- ঃ ব্যাটা, অফিসেই আছে। আপনার গায়ে যদি হাত দেয়, আপনিও ছাড়বেন না । আমরা আছি । তেজগাঁ শিল্প এলাকায় আমাদের পরিশ্রমের অর্থে গড়া নতুন অট্টোলিকায় ঢুকে লক্ষ্য করলাম রিসিপশনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন সাগর ভাই। সঙ্গে ‘চ্যানেলটির পিএম (প্রোগাম ম্যানেজার) শিশু সাহিত্যিক আমিরুল ইসলাম। আমিরুল দেখেই চিৎকার করে বলে উঠলো- ঃ কী খবর নাজাত ভাই, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম নিয়া আইছেন নাকি? আমিরুলের কথায় বুঝলাম, পদত্যাগের বিষয়টি ও জানে না। সাগর ভাই বললেন- ঃ আম না, নাজাত বোম নিয়ে এসেছে। সাগর ভাই-এর সাথে তার রুমে গেলাম। বসার আগেই সাগর ভাই বললেন- ঃ কী পাগলামী শুরু করছো? ছাড়ো এসব। ‘চ্যানেল আই যেমন সিরাজের, তেমনি তোমারও। বেতন বাড়িয়ে দিচ্ছি। যাও, কাজ করো গিয়ে। যতোবারই না বলেছি, ঠিক ততোবারই সাগর ভাই বিভিন্নভাবে সেই একই কথা বললেন। বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে বললাম- ঃ কাজ করতে পারি এক শর্তে । ঃ শর্ত মানে ? ঃ বার্তা প্রধানের পদ থেকে সিরাজকে বাদ দিয়ে মামুন ভাইকে বসান। জেলা প্রতিনিধিদের বেতন বাড়ান। ওই অযোগ্য লোকের অধীনে কাজ করা যায়না । সাগর ভাই হঠাৎ লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। মুখটাও তার কালো হয়ে গেলো। মনে হলো এই প্রাণীটিকে নিয়ে তারও অনেক যন্ত্রণা আছে। অজ্ঞাত কারণে কিছুই করার নেই তাঁর। একপর্যায়ে সাগর ভাই অনেকটা হতাশ হয়েই বললেন- ঃঠিক আছে । দেখা যাক, কী করা যায়। পরে তোমাকে জানাবো। নাস্তা পর্ব শেষে সাগর ভাই তার নিজের লেখা ৭টি বই দিলেন । রুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় তিনি দরজা পর্যন্ত এগিয়েও দিলেন। লক্ষ্য করলাম, সাবেক ১০/১২ জন সহকর্মী এদিক/সেদিক ঘোরাঘুরী করছেন। ভয়ে কেউ কথা বলারও সাহস পাচ্ছেন না। অফিস থেকে যখন বেরিয়ে এলাম তখন ৪/৫ জন কাছে এসে সাগর ভাই কী বললেন তা জানতে চাইলেন। বিস্তারিত জানানোর পর তারা বললেন- ঃ আমরাও তৈরী ছিলাম। ওই ব্যাটা কিছু বললেই আমরাও ছাড়তাম না। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত ছিলো। আপনি অফিসে ঢোকার আগেই সাগর ভাই ওই ব্যাটাকে তার রুম থেকে বের হতে বারণ করেছিলেন। প্রথমে যে ১১ জন নিয়োগপত্র পেয়েছিলাম, এরমধ্যে ৭ জনের উচ্চারণ ছিলো ত্রুটিযুক্ত। অডিওতে তাদের আঞ্চলিক ভাষা প্রকাশ পেতো । সে কারণে তাদের পাঠানো সংবাদ ন্যাশনাল ডেক্সের অডিওর মাধ্যমেই প্রচারিত হতো। আর আমার রিপোর্ট প্রচারিত হতো আমার অডিওতেই। এমন কি, প্রত্যেক প্যাকেজ রিপোর্টেই পিটিসি থাকতো আমার। ঢাকার রিপোর্টারদের মতো আমার রিপোর্ট ততো ভালো না হলেও একেবারে যে খারাপ ছিলো,তাও নয় । মফস্বলে বাস করলেও ঢাকা আর মফস্বলের রিপোর্টের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিলো না। যদি না তা-ই হতো, তাহলে আমার রিপোর্ট কী করে অডিও এবং পিটিসিসহ প্রচারিত হতো? আমি কৃতঞ্জ বন্ধু শাহ্ আলমগীরের কাছে। কেননা, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পটুয়াখালী, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, রাঙামাটি যেখানেই গেছি, তাকে জানিয়ে সঙ্গে ক্যামেরা নিয়ে গেছি। ওইসব জেলা ঘুরে এক একটি জেলার ৩/৪ পর্ব পর্যন্ত ধারাবাহিক রিপোর্ট করেছি। যা ‘চ্যানেল আইতেই প্রচারিত হতো ।রিপোর্ট করার যোগ্যতা না থাকলে কী এইসব রিপোর্ট প্রচারিত হতো? এমন সুযোগ ৬৩ জেলায় কর্মরত কোনো প্রতিনিধি পেয়েছেন কিনা সন্দেহ। অথচ প্রচারিত ওইসব রিপোর্টের একটি পয়সাও দুর্লভ প্রাণী এই শাইখ সিরাজ কোনদিনও দেননি। এমন হৃদয়হীন মানুষের অধীনে কী কাজ করা যায় ? যায় না জন্যই স্বেচ্ছায় স্বপদ থেকে পদত্যাগ করি। আমার ‘পদত্যাগ করা নিয়ে যখন ই-মেইল, ফেসবুক, মোবাইলে ঝড় বইছে, তখন একদিন অপ্রত্যাশিত ফোন করলেন ‘চ্যানেল আই নিউজের সেকন্ড ইন কমান্ড সাইফুল আমীন।তিনি বললেন- ঃ নাজাত ভাই, সিরাজ ভাই আপনার সাথে কথা বলতে চান। ঃকেনো? ঃ তাতো জানি না, ওনার কাছ থেকেই শোনেন। বলেই মোবাইলটি দুর্লভ প্রাণীর হাতে দিলেন। শুরুতেই প্রাণীটি যা বললেন তাতে মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে গেল। বললেন- ঃ নাজাত বলছেন ? ঃ মানে ? ঃ না মানে, নাজাত বলছেন কী না…. ? ঃ এই মিয়া, নাজাত মানে কী ? হয় বলেন নাজাত সাহেব অথবা নাজাত ভাই। একজন ভদ্রলোকের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়, জানেন না ? কথাটি শুনে প্রাণীটি একটু যেনো কেমন হয়ে গেলেন। বললেন- ঃ না, তা অবশ্য ঠিক। আপনি আর আমিতো প্রায় সমবয়সী। যাইহোক, নাজাত ভাই, আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করা যায় না? ঃ প্রশ্নই ওঠেনা। ঃ এসব কী শুরু করেছেন? ঃ কী শুরু করেছি ? ঃ ফেসবুক, ই-মেইলে? মান-ইজ্জত কিচ্ছু থাকলো না। ঃ আপনার মান-ইজ্জত আছে নাকি? ঃ প্লিজ, এগুলো থামান। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসুন। আপনার জন্য সব সময় দরজা খোলা। ঃ প্রশ্নই ওঠেনা। ১ কোটি টাকা বেতন দিলেও আপনার অধীনে কাজ করবো না। ঃ এগুলো অন্ততঃ বন্ধ করুন। ঃ আধুনিক প্রযুক্তিতে আপনি যেমন ঝাপসা কানা, আমিও তাই। আদিত্য শাহীন আপনার ই-মেইল, ফেসবুক যেমন ব্যবহার করে দেন, আমার ছেলেরাও তেমনি আমার কাজগুলো করে দেয়। আমি ওগুলো বন্ধ করবো কী করে? ঃ কিছু একটা করুন ? ঃ আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দুর্লভ প্রাণী আরও প্রায় ৮/১০ মিনিট ধরে কথা বললেন।শেষে বলতে বাধ্য হলাম- ঃ আপনার দপ্তরেতো অনেক ইঞ্জিনিয়ার আছেন, পারলে ওনাদের দিয়েই কাজটি করে নিন। জেলা প্রতিনিধি হিসেবে চ্যানেল আইতে এখন যারা কর্মরত আছেন, তাদের অধিকাংশ জনের মেজাজ এখন খুবই খারাপ । কেউই ঠিকমতো কাজ করেন না। আর করবেনই বা কী করে? ১৫শ, ২ হাজার, আর ৫ হাজার টাকায় কী ভালো কাজ করা যায়? সে কারণে ২/৪ জন ছাড়া বাকি অধিকাংশ জেলা প্রতিনিধিই আর আগের মতো কাজ করেন না । বলেন নানা কথা । ঃ তাহলে কাজ করছেন কেনো? পদত্যাগ করুন। ঃ কাজ করতে মোটেই ইচ্ছে করে না। কিন্তু ……. ঃ কিন্তু কী ? ঃ এখন চ্যানেলটির অনেক নাম হয়েছে। পদত্যাগ করলেই সাংবাদিক নামধারী বহু শেয়াল, কুকুর তৈরী হয়ে আছে। টাকা ছাড়াই ওরা কাজ করবে।পারলে বার্তা প্রধানকেই উল্টো মাসিক চাঁদা,উপঢৌকন দেবে । ঃ তাহলে চালিয়ে যান। ফোন করেছেন কেনো? ঃ আমরা জিম্মি। এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান হলেই ফোন আসে । ফুটেজ করলেইতো কিছু না কিছু পাওয়া যায়। এখন অনেক চ্যানেল হওয়ায় আগের সেই রেটও কমে ২শ তে এসে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে কেউ ৫০ টাকা দেবেন কী না সন্দেহ। তাই কোন মতে ধরে আছি আর কী । প্রতিনিধিরা আরও জানান, নতুন নতুন চ্যানেলে এখন যারা কাজ করছে,তারা এলাকার ছোট ভাই। কোনো অনুষ্ঠান হলে ওদের বলি। ওরাই নিজেদের চ্যানেলে ফুটেজ পাঠানোর পর সেই একই ফুটেজ ‘চ্যানেল আইতেও পাঠিয়ে দেয় ।ওদের চ্যানেল আই-এর আইডি এবং পাসওয়াড দেয়া আছে ।তারা আরও জানান,বড় কোন ঘটনা-দূর্ঘটনা ঘটলে তখন তারা ঘটনাস্থলে যান এবং ফোনে ডেক্সে তথ্য দেন অথবা ‘লাইভ করেন। হায়রে জেলা প্রতিনিধি! হায়রে মফস্বল সাংবাদিকতা! টিভি চ্যানেলের দোকানদার মালিকেরা সাংবাদিকতা এখন কোথায় নিয়ে গেছেন! ২০০৭ সালের কথা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় বাস করেন একজন সাদা মনের মানুষ। নাম জিয়াউল হক জিয়া। বাবার আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে পড়া-লেখা করতে পারেন নি। আর এই না পারার যন্ত্রণা থেকেই পরবর্তী সময়ে নিজে কোনরকম স্বচ্ছল হয়ে তিনি তাঁর এলাকার গরীব ছাত্রদের পড়া-লেখার ব্যবস্থা করেন। এটাই তাঁর আনন্দ। পেশায় দই বিক্রেতা এই জিয়া ভাই দই বিক্রির টাকায় নিজে যেমন চলতেন, ঠিক একইভাবে বিভিন্ন পাঠ্য বই কিনে এইসব গরীব ছাত্রদের পড়া-লেখার সুযোগ করে দিতেন। এভাবে তার এক বিরাট পাঠাগার গড়ে ওঠে। আর সেই পাঠাগারে পড়া-লেখা করে সেসময় ৪শ ২২জন ছাত্র গ্র্যাজুয়েট হন। যার ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি জানার পর সেসময় জিয়া ভাইকে নিয়ে চ্যানেল আইতে একটি প্যাকেজ রিপোর্ট করি। সেই রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট এক প্রশ্নের উত্তরে জিয়া ভাই বলেছিলেন- ঃ একজন দুর্লভ মানুষের সন্ধানে আছি। পাঠাগারে জমে থাকা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বই জায়গার অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। একজন ‘দানবীর পেলে বইগুলো রক্ষা করা যেতো। সেই রিপোর্টের পিটিসিতে বলেছিলাম- ‘দেশে এমন কোন দানবীর কী নেই, যিনি এই দুর্লভ ব্যক্তির স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসতে পারেন? রিপোর্টটি প্রচারিত হবার ৩/৪ দিন পর এক ভদ্রলোক ফোন করলেন ।বললেন, তারা জিয়া সাহেবকে সাহায্য করতে চান। তবে তাঁকে ঢাকায় যেতে হবে। জিয়া ভাই-এর সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি তাঁকে জানাই। জিয়া ভাই রাজি হন। নির্দিষ্ট একটি দিনে আমরা ঢাকার উদ্দশ্যে রওনা হই। ঢাকা পৌঁছে যোগাযোগ করা হলে গুলশানের একটি ব্যাংকে যেতে বলা হয়। নাম এইচএসবিসি ব্যাংক। বহুজাতিক কোম্পানীর এই ব্যাংকটির নামও তখন পর্যন্ত আমি শুনিনি। কথা মোতাবেক সেই ব্যাংকে গিয়ে হাজির হলাম। রিসিপশনে ১৫/২০ মিনিট অপেক্ষার পর ২ ভদ্রলোকসহ এক মহিলা এলেন। মহিলাটি দেখতে বেশ সুন্দর। অনেকটা পরীর মতো। একজন বললেন- ঃ সাংবাদিক সাহেব, মোবাইলে আমি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মূলতঃ এই ম্যানেজার ম্যাডামই কথা বলতে বলেছিলেন। ম্যানেজার ম্যাডামের নাম লায়লা বেগম। বাড়ি চট্টগ্রামে। তার বাবা-মা থাকেন আমেরিকায়। তিনি তাঁদের একমাত্র সন্তান । বিয়ে-সাদী করেন নি। ঢাকাতেই বসবাস করেন। ম্যানেজার ম্যাডাম সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে তার রুমে নিয়ে গেলেন। কিছুপর জিয়া ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন- ঃ চাচা মিয়া, আপনার কোন জিনিসটি বেশি প্রয়োজন ? ঃ বুজি, বইগুলো মাটিতে পড়ে থাকায় নষ্ট হতে বসেছে। ছোট-খাটো একটা ঘর হলে খুব ভালো হয় । ঃ ঘর করতে কতো টাকা লাগতে পারে? ঃ ধরেন, প্রায় লাখ খানেক। ঃ আর কী দরকার ? ঃ পাঠাগার থেকে আগামী বছর ৩০ জন ছাত্র বিএ পরীক্ষা দেবে। ওদের ভালো বই নেই। বইগুলো খুব দরকার । ঃ বুকলিষ্ট এনেছেন ? ঃ জ্বী। বলেই জিয়া ভাই ব্রীফকেস খুলে একটা মোটা বুকলিষ্ট বের করে দিলেন। ঃ আর কী প্রয়োজন ? ঃ ৩টি ষ্টীলের আলমারী হলে খুব ভালো হতো। ঃ ৩টি আলমারীর দাম কতো? ঃ একটার দাম ৯ হাজার। মোট ২৭ হাজার টাকা । ম্যানেজার ম্যাডাম এবার তার কথা থামিয়ে অনুরোধ করে বললেন- ঃ সাংবাদিক সাহেব, চাচা মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বিকেলে কী একবার আসা যায়? রাজি হলাম এবং ব্যাংক থেকে বেরিয়ে এলাম। পথে জিয়া ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম- ঃ সবগুলো বই-এর দাম কত হতে পারে? ঃ প্রায় লাখ খানেক টাকা। দ্বন্দ্বে পড়লাম ।মনে মনে ভাবলাম বই, আলমারী, নাকি ঘর বানিয়ে দেয়ার টাকা দেবেন ম্যাডাম? জিয়া ভাই আশ্বস্ত করে বললেন- ঃ কি দিবে না দিবে বিকেলেই দেখা যাবে। ঢাকায় কোনদিন আসিনি।আগে হানিফ সংকেতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। বিটিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির জনপ্রিয় উপস্হাপক হানিফ সংকেত আমার বন্ধু। ১৯৭৬ সালে ও যখন কাপ্তাই-এ পড়া-লেখা করতো, তখন নিয়মিত ছড়া,কবিতা লিখতো। নিজেও যেহেতু লেখালেখি করতাম, সেহেতু হানিফের সঙ্গে চিঠিপত্রে প্রায়ই যোগাযোগ হতো। আর এভাবেই ওর সাথে বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। যা পরবর্তীতে অনেক কাছাকাছি হই । অথচ ১৫/২০ বছর থেকে ওর সাথে কোন যোগাযোগই নেই। মনে মনে ঠিক করলাম, চ্যানেল আই-এ গেলে হয়তোবা হানিফের মোবাইল নম্বরটা পাওয়া যেতে পারে। সে কারণে জিয়া ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ছুটলাম চ্যানেল আই কার্যালয়ে । অফিসটি তখন ছিলো সিদ্ধেশ্বরীতে। ভাড়া করা ভবনে চলতো এর কার্যক্রম। সিঁড়ির মুখেই দেখা হলো দুর্লভ প্রাণী শাইখ সিরাজের সঙ্গে। জিয়া ভাইকে পরিচয় করিয়ে দিলাম বটে কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়াই লক্ষ্য করলাম না। অথচ জিয়া ভাই সত্যিকার অর্থেই যে তার চাইতেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একজন ‘সাদা মনের মানুষ, তা উনি পাত্তাই দিলেন না। অজ্ঞাত কারণে প্রাণীটি তখন তার রুমে দেখা করতে বললেন। যখন গেলাম, তখনও তিনি নিশ্চুপ। কোন কথাই বলছিলেন না । সে কারণে বাধ্য হয়েই বললাম- ঃ সিরাজ ভাই, হানিফ সংকেতের মোবাইল নম্বরটা কী আছে ? ঃ কেনো? ঃ জিয়া ভাই ওর সাথে সাক্ষাৎ করতে চান,সে কারণে কথা বলা দরকার। দুর্লভ প্রাণীটি সব সময় স্যার শোনার জন্য কান খাড়া করে রাখেন ।কেউ স্যার না বললে উনি বেয়াদব মনে করেন ।আমি স্যার না বলায় আমার উপর উনি মহা নাখোশ । তারপরও অনিচ্ছা সত্বেও প্রানিটি একরকম বাধ্য হয়েই পিএসকে ফোন করে হানিফ সংকেতের সাথে কথা বলতে চাইলেন। যখন সংযোগ দেয়া হলো তখন বোঝা গেলো উভয়ের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভালো। অনেকক্ষণ ধরে কথা বললেন। একপর্যায়ে বললেন- ঃ আমার চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি তোর সাথে কথা বলতে চায়। ধর, কথা বল। প্রাণীটি রিসিভার এগিয়ে দিলেন বটে। তবে তা ছিলো অনেকটা তাচ্ছিল্যের সাথেই। বাম হাতে রিসিভারটি এগিয়ে দিলেন। ‘হ্যালো বলতেই হানিফ বন্ধুসুলভ একটি গালি দিয়ে বললেন- ঃ কী খবর চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘নবাব । এদ্দিন পর কোত্থেকে হাজির হলি? ঃ মোবাইল নম্বরটা দে। পরে কথা বলছি। হানিফকে ‘তুই সম্বোধন করায় দুর্লভ প্রাণীটি কেনো জানি বিষ্মিত হলেন। বললেন- ঃ হানিফকে ‘তুই বললেন যে ? ঃ ও আমার বন্ধু। ঃ ওতো আমার বন্ধু। ঃ আপনার ‘বন্ধু হলে আমার বন্ধু হওয়া যাবে না? এ সময় আদিত্য শাহীন, সান্তুনু, শহীদুল্লাহ টিটন (মরহুম) প্রমুখ বললেন- ঃ বস, নাজাত ভাই ব্রিটিশ মাল। তার সম-সাময়িক অনেকেই বড় বড় জায়গায় কাজ করেন । প্রসঙ্গটি এ কারণেই এখানে উপস্থাপন করলাম যে, দুর্লভ প্রাণী এই শাইখ সিরাজ চ্যানেল আই ব্যবহার করে রাতারাতি অনেক বেশি পরিচিতি লাভ করায় সব মানুষকে তিনি আর মানুষই মনে করেন না। বাঙালী বাবু হওয়া সত্বেও তিনি নিজেকে মনে করেন ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা। কী বিচিত্র মানসিকতার অধিকারী এইসব ভন্ড প্রাণিকুল । বিকেলে এইচএসবিসি ব্যাংকে হাজির হলাম। ভেতরে ঢোকা মাত্রই বিস্মিত না হয়ে পারলাম না। কেননা, পুরো ব্যাংক তখন বই-এর কার্টুনে ভরা। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই ম্যানেজার ম্যাডাম ঠিকই ‘বুকলিস্ট মোতাবেক সব বই সংগ্রহ করেছেন। শুধু বই-ই না, বইগুলোর পরিবহন খরচও তুলে দিলেন জিয়াউল হক জিয়াকে। একই সাথে ঘর বানানো বাবদ ১ লক্ষ এবং ৩টি আলমারী কেনা বাবদ ২৭ হাজার, মোট ১ লক্ষ সাতাশ হাজার টাকার একটি চেকও তুলে দিলেন তাঁর হাতে। সঙ্গে থাকা ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে দৃশ্যগুলো ধারণ করতে চাইলেও ম্যানেজার ম্যাডাম তা আর করতে দিলেন না।বললেন- ঃ এগুলো ব্যাংকের পক্ষ থেকে নয়। আমরা ৩ জন বান্ধবী। ২ জন বিদেশে কাজ করেন। কোনো ভালো কাজে আমরা যৌথভাবেই অংশগ্রহণ করি । সমাজে এ ধরণের মানুষও যে এখনও বাস করেন, তা সেদিন নতুন করে অনুভব করলাম। দুর্লভ প্রাণী এই শাইখ সিরাজকে নিয়ে আরও অনেক কিছুই লেখার ছিলো কিন্তু লিখলাম না। এই চরিত্রের অধিকারী প্রাণীগুলোর কোনদিন কোন লজ্জা-শরম ছিলোনা কিংবা আগামীতেও থাকবে না ।তারপরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে, বিশেষ করে মফস্বলে কর্মরত সাংবাদিকদের উৎসাহীত করার জন্যই একই সাথে আগে দেয়া সেই ‘পদত্যাগপত্রটি একই সাথে সংযুক্ত করলাম।কেননা,আগামীতে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা যাতে করে সত্য প্রকাশে উৎসাহী এবং সাহসী হন। আর দৃঢ় চিত্তে সৎ সাহস নিয়ে সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালোই বলতে পারেন । বিশেষ করে শাইখ সিরাজ গংদের মতো যেসব নতুন নতুন ভন্ড আগামী পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করবে,তাদের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন করতে এরা উৎসাহী হন ভেবে । চ্যানেল আই-এ প্রেরিত পদত্যাগপত্র জনাব শাইখ সিরাজ তারিখঃ ১৯ জুন ২০১১ পরিচালক ও বার্তা প্রধান চ্যানেল আই ৪০, শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ স্মরণী তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা। বিষয়ঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাখ্যাসহ পদত্যাগ প্রসঙ্গে। জনাব, নিবেদন এই যে, চ্যানেল আই-এর যাত্রা শুরুর পর যে ১১ জনকে প্রথম ‘জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, তাদের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারী একজন। টানা ১০ বছর অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে এলেও যে পারিশ্রমিক ও সন্মানে সম্মানীত হওয়া উচিৎ ছিলো, তার বিন্দুমাত্র মূল্যায়ণ ও ১০ বছর থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ১টি পয়সাও বেতন বৃদ্ধি না করায় নীচে উল্লিখিত ব্যাখ্যার মূল্যায়ণে সর্বপরি মানসিক তৃপ্তির স্বার্থে স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি। একই সাথে প্রত্যাশা করছি, দেশের মূল সংবাদের প্রাণকেন্দ্রই যখন অবহেলিত গ্রামাঞ্চল, সেখানে সেই গ্রামাঞ্চলের প্রকৃত সাংবাদিকদের আর অবমূল্যায়ণ না করে এখন থেকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক, মূল্যায়ণ ও সম্মান প্রদর্শন করবেন। তা না হলে ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের ৬৩ জেলার প্রকৃত সাংবাদিকদের রক্তের আঁচড়ে গড়া আপনাদের নতুন অট্টালিকা নীরব কষ্টের দীর্ঘশ্বাসে একদিন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।
০১.নিজেকে আপনি কি মনে করেন মিঃ সিরাজ? পুলিতজার বিজয়ী সাংবাদিক? জনপ্রিয় উপস্থাপক? কলামিষ্ট? আন্তর্জাতিক মানের ক্যামেরাম্যান? না, কোনটিই যথার্থ অর্থে আপনি নন। কেননা, বাংলাদেশের প্রকৃত সাংবাদিকদের যোগ্যতা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আপনার এবং আমার উপযুক্ত মূল্যায়ণ যদি করা যায়, তাহলে দেখা যাবে, আপনার চেয়ে আমি বড় সাংবাদিক না হলেও কোন অংশে ছোট নই। যেমন ধরুন, ‘৮০-র দশকে আপনি যখন বিটিভিতে ‘মাটি ও মানুষ করতেন, আমি তারও অনেক আগে থেকেই ওই একই প্রতিষ্ঠানে নাটক ও গান লিখতাম। অর্থাৎ ‘৭০ দশক থেকেই লেখালেখি শুরু করে অদ্যাবধি লিখছি। সে অর্থে আমি একজন প্রকৃত সাংবাদিক তো বটেই, একজন লেখকও। শুধু তাই-ই নয়, আমি বিটিভি ও রেডিওর একজন তালিকাভুক্ত ‘এ গ্রেডের নাট্যকার, গীতিকার, পাণ্ডুলিপি রচয়িতা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও মঞ্চ অভিনেতা। আপনার কি মৌলিক কোন সৃষ্টি আছে মিঃ সিরাজ? যদিওবা আপনার নামে ২/৪টি লেখা দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং হয়ও কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, লেখাগুলোর প্রকৃত রচয়িতা আপনি নন, লিখে দেন আপনারই আশির্বাদপুষ্ট জনৈক সাংবাদিক। যা আমি নিজেও ওই সাংবাদিককে আপনার নামের সেই লেখাগুলো কম্পিউটারে কম্পোজ করতে দেখেছি। তাহলে আপনি কিসের লেখক? এবার আসুন সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে। চ্যানেল আই তার যাত্রা শুরুর ১০ বছর আগে থেকে আমি ১টি সাপ্তাহিক ও ১টি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক। সাপ্তাহিক পত্রিকাটি ধারাবাহিক ভাবে ৯ বছর চালানোর পর দৈনিক পত্রিকাটির কার্যক্রম শুরু করি। স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশের কারণে ২টি পত্রিকাই ৩ বার ব্যান্ড হয়, মামলাও হয় ১৪টি, হুলিয়া হয় ২ বার, বাড়ী-ঘরের মালামাল ক্রোক হয় ৩ বার। যদিওবা দেশের প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিয়ে ৩ বারই জয়লাভ করেছি এবং ধারাবাহিক প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছি। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এ লাইনে আপনি আসার অনেক আগে থেকেই আমি সাংবাদিক। কারো দালালী করলে নিশ্চয়ই এমনটি হতো না।
এবার আসুন ক্যামেরা প্রসঙ্গে। মফস্বল জেলা শহরে বাস করি জন্য ক্যামেরা সংক্রান্ত তেমন কোন ভালো ধারণা কিংবা প্রশিক্ষণ আমার নেই। কিন্তু তারপরও নিজে ক্যামেরা চালিয়ে চ্যানেল আই-এ রিপোর্ট করেছি, কখনোবা পিটিসি দেয়ার জন্য পথের মানুষ ধরে ১মিনিটে ক্যামেরা চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে পিটিসিও দিয়েছি। আর এভাবেই গত ১০ বছরে চ্যানেল আইতে অনেক, অ-নে-ক রিপোর্ট করেছি। আপনিতো এসেছেন ক্যামেরা চালাতে চালাতেই। কোন প্রশিক্ষণ না থাকা স্বত্বেও ক্যামেরা চালিয়ে যখন রিপোর্ট করতে পেরেছি, তাহলে ক্যামেরাম্যান হিসেবে কে যোগ্য? অথচ আপনার ভবন থেকে অনেকেই যখন অতিষ্ট হয়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন, তখন আপনি বিভিন্ন জনকে বলেছেন, আপনার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে চলে গেলেও আবারও তাকে ফিরে আসতে হবে। আমি চলে যাওয়ার পর হয়তো আমার ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলবেন। কিন্তু না, এটা মোটেই সঠিক নয়। আপনি মাসিক এক লক্ষ টাকা বেতন দিলেও আমি অন্ততঃ আপনার অধীনে কোনদিনও ফিরে যাবনা। বলা ভাল, আমি আমার মেধার যোগ্যতায় কাজ শিখেছি। এখানে আপনার এক সেকেণ্ডেরও কোন ভূমিকা কিংবা সহযোগিতা নেই। তাহলে আপনি আর আমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আর সে কারণেই এমন অযোগ্য ব্যক্তির অধীনে কাজ করা মোটেই যথার্থ নয় ভেবেই কিছুটা বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
০২.মিঃ সিরাজ, আপনার চেয়ে আমার যোগ্যতা কম নয় এ কারণেই যে, বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সফর করে চ্যানেল আইতে অনেক সংবাদ করেছি। শুধু সংবাদই না, এক একটি জেলায় গিয়ে ৩ থেকে ৫ পর্ব পর্যন্ত ধারাবাহিক প্রতিবেদনও করেছি অনেক। এখানে আপনার আর আমার মধ্যে শুধু পার্থক্য হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশ ঘোরেন চ্যানেল আইকে ব্যবহার করে গ্রামীণ ফোন ও বাংলালিংকের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে, আর আমি রিপোর্ট করেছি জনস্বার্থে আত্মতৃপ্তির জন্য। অথচ বিল হিসেবে একটি টাকাও কোনদিন দেননি, দেননি বিভিন্ন জেলায় ঘোরার কোন খরচও। সে কারণে বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
০৩.চ্যানেল আই-এর নিয়ম অনুযায়ী কোন রিপোর্টারের রিপোর্ট ২ মিনিটের বেশি স্থায়ী হওয়া যায় না। যা আপনারই হুকুম। অর্থাৎ একটি রিপোর্ট প্রচার করতে হলে ২ মিনিটের ১ সেকেণ্ডও বেশি সময় কোন রিপোর্টারকে দেয়া হয়না। আর সে কারণেই অন্যান্য রিপোর্টারের মতো আমিও যতগুলো রিপোর্ট করেছি, তার প্রায় সবগুলোই দেড় থেকে ২ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়েছে। অথচ আপনি বার্তা প্রধানের দাম্ভিকতায় এক একটি রিপোর্ট তৈরী করেন সাড়ে ৩ মিনিট থেকে ৪ মিনিটের মধ্যে। তাহলে বলুন, যে রিপোর্ট আমি ৩/৪জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে শেষ করছি, সেখানে আপনি সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ৮/১০ জনের। তাহলে যোগ্য রিপোর্টার কে? এমন দাম্ভিক ব্যক্তির অধীনে কাজ করা কি শোভনীয়? না, মোটেই শোভনীয় নয় ভেবেই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
০৪.চ্যানেল আই-এর ভাড়া করা ভবন থেকে নতুন অট্টালিকায় আসা পর্যন্ত মোট প্রায় ১০ বছরে আপনি এবং আপনার আশির্বাদপুষ্ট জনাব আদিত্য শাহীন বহুবার, খুব শিঘ্রই আপনাদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে বলে মিথ্যে আশ্বাস দিলেও সেই আশ্বাসের বাণী আজও নীরবে কাঁদে। তাহলে এমন ব্যক্তির অধীনে কি কাজ করা যায়? যায়না বলেই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
০৫.আপনার প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন, বিশেষ করে রিপোর্টিং-এ, তাদের মাসিক বেতন কতো? আর আমাদের? ১০ বছর আগে ‘বেতন দিচ্ছি, দেবো করে দুই বছর ফাঁকি দিয়ে দেড় হাজার টাকা মাসিক বেতন দেয়া শুরু করলেন। তাও আবার অনিয়মিত। প্রায় ২ বছর পর কারো কারো বেতন বাড়লো ৫শ টাকা। অর্থাৎ কারো বেতন হল ২ হাজার, আবার কেউবা এখন পর্যন্ত সেই দেড় হাজারেই আছেন। এটা কি মিঃ সিরাজ? সেই থেকে এখন পর্যন্ত আর একটি পয়সাও কি বাড়ানো হয়েছে? না, হয়নি। তাহলে কাজ করবো কেন? আর সে কারণেই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
০৬.গত ১০ বছরে একমাত্র আমরা ছাড়া (জেলা প্রতিনিধি) যারা চ্যানেল আইতে কাজ করছেন, তাদের প্রতি বছর পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি ও বিশেষ দিবস উপলক্ষে বোনাস দেয়া হলেও আমাদের কি দিয়েছেন মিঃ সিরাজ? আপনার ঢাকার রিপোর্টাররা যে রিপোর্ট করেন, সেই রিপোর্ট আর আমাদের রিপোর্টের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে? থাকলে কি কোনদিন তা প্রচারিত হতো? তাহলে তারা যদি হয় রিপোর্টার, আমরা কি? আপনার অবগতির জন্য বলি, ঢাকার রিপোর্টাররা ‘বিট ভাগ করে রিপোর্ট করেন। আর আমরা বিট ছাড়াই খুন, ধর্ষণ, হত্যা, খেলা-ধুলা, মারামারি, বাজার দর, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সংবাদ ইত্যাদি সব ধরনের রিপোর্ট করে থাকি। তাহলে আমাদের এই অবমূল্যায়ণ কেন? যেহেতু বছরের পর বছর ধরে বিবেকহীনভাবে আমাদের মূল্যায়ণ করা হচ্ছে না, সে কারণেই বিবেকহীণ ব্যক্তির অধীনে কাজ করা মোটেই শোভনীয় নয়। আর সে জন্যই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
০৭.গত প্রায় ২ বছর থেকে আপনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘কৃষি দিবানিশি নামে একটি বাণিজ্যিক অনুষ্ঠান করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছেন। আমরা ৬৩ জেলার সাংবাদিকরা কি বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেউ? তাহলে আমরা কেন সেই অনুষ্ঠানের ফুটেজ কিংবা কারও সাক্ষাৎকার ধারণ করে আপনাকে পাঠাবো? অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বার্তা প্রধানের পদ ব্যবহার করে সেই অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে বাধ্যতামূলক ভাবে আমাদের ব্যবহার করছেন। অথচ দিচ্ছেন না একটি পয়সাও। আপনার প্রয়োজনে বিভিন্ন জেলার জেলা প্রতিনিধিদের ফোন করে বিটিভির অনুষ্ঠানের জন্য ফুটেজ, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি ‘লোগোহীন চেয়ে নিচ্ছেন, আর প্রচার করছেন। এটা কি কোন কথা হলো? আর হলো না জন্যই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
০৮. দেশে কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন এমন দাবি করে নিজের নামের আগে লেপ্টে নিয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। প্রকৃত অর্থে কি এটা যথার্থ? চোখ বন্ধ করে একবার নিজেই নিজের আত্মসমালোচনা করে দেখুনতো। না, আপনি এমন ব্যক্তিত্ব নন। আপনি যা পারেন তা হল মফস্বলের অসহায় এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের শ্রম আত্মসাৎকারী একজন বহুরূপী ব্যক্তিত্ব। টাকা দেবেন না, পয়সা দেবেন না, দেবেন শুধু হুকুম, এটা কি কোনদিন চলে? আর চলে না জন্যই স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
০৯. প্রকৃত অর্থে চাঁদাবাজ সাংবাদিক কে মিঃ সিরাজ? আমরা নাকি আপনি? তবে হ্যাঁ, একথা অস্বীকার করার কোন কারণ নেই যে, আমাদের মধ্যেও এমন কিছু চাঁদাবাজ আছেন, যারা বরং আপনারই দোসর। অতি সম্প্রতি যে ৭/৮ জনের পদোন্নতি দেয়া হলো তারা কেমন, তা কি জানেন? নাকি জানার চেষ্টা করেছেন? যেহেতু দীর্ঘদিন কাজ করার পর তারা পদোন্নতি পেলো, সেহেতু আর যাইহোক না কেন, বিষয়টি ভীষণ ভাল লেগেছে। যদিওবা এদের অনেকেরই প্রকৃত যোগ্যতা নেই, নেই শুদ্ধ উচ্চারণ, সুন্দর বাচন ভঙ্গী এবং পিটিসি দেয়ার উপযুক্ত সাবলিলতা। এক্ষেত্রে একথাও বলা প্রয়োজন যে, ৬৩ জেলার মধ্যে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ জনের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা থাকলেও আপনি এদের কাউকেই তা দেননি। দেননি এ কারণেই যে তারা আপনার দোসর নন। কিন্তু তারপরও বলবো, যাদের আপনি পছন্দের তালিকায় রেখেছেন, তারা ‘চ্যানেল আইকে প্রতিদিন তাদের নিজ নিজ জেলায় কিভাবে বিক্রি করছেন? এরা যে কোন অনুষ্ঠানের ফুটেজ নেয়ার নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছেন। অথচ এ বিষয়গুলো জানার পরও এদের প্রতিরোধ করার কোন উদ্যোগ আপনার নেই। আমার ধারণা, আপনার কারণেই এরা চাঁদাবাজ হতে বাধ্য হয়েছেন। আর এ জন্যই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১০.গত প্রায় ৫/৬ বছর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রতিনিধিদের আপনার দপ্তরে ডেকেছিলেন। সেই প্রতিনিধি সভায় আমারও যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে রাজশাহী প্রতিনিধি আবু সালেহ মোহাম্মদ ফাত্তাহ বেতন বাড়ানো প্রসঙ্গে আপনাকে অনুরোধ জানালে আপনি ক্ষিপ্ত হয়ে চ্যানেল আই থেকে তাকে বেরিয়ে যাওয়ার হুংকার দিয়েছিলেন। আপনার হুংকার শোনার পর সেদিন নিজেকে খুব ছোট মনে হয়েছিলো। আর সে কারণে দাঁড়িয়ে আপনার কথার প্রতিবাদ করেছিলাম এবং আপনাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবী জানিয়েছিলাম। আপনিও সেদিন অজ্ঞাত কারণে সম্ভবত ভয় পেয়েছিলেন এবং মনে করেছিলেন ক্ষমা না চাইলে হয়তোবা সব প্রতিনিধি চ্যানেল আই ছেড়ে চলে যাবে। আর এ কারণেই সেদিন সবার সামনে মাফও চেয়েছিলেন। এখন আপনার বোঝা উচিৎ, সৎ সাহস না থাকলে কি সরাসরি আপনাকে এমন ক্ষমা চাওয়ার কথা বলতে পারতাম? বার্তা প্রধান হিসেবে সেদিনই অথবা পরে হয়তো আমাকে চ্যানেল আই থেকে বাদও দিতে পারতেন। কিন্তু দেননি। দেননি এ কারণেই যে, রিপোর্টার হিসেবে নিশ্চয়ই আমি অযোগ্য নই। অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই রাজশাহী শহরে আপনি এলে জনাব ফাত্তাহ (ওর মুখ থেকে অনেকের সামনে শোনা) আপনাকে খাজা, গুড়, সিল্কের পাঞ্জাবির কাপড়, আম ইত্যাদি কিনে দেন, আর আপনিও এগুলোর কোন দাম না দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানীর সৌজন্যে পাওয়া এসি গাড়ীতে চড়ে ঢাকা ফিরে যান। এটা কিসের ইঙ্গিত বহন করে মিঃ সিরাজ? এটা কি চাঁদাবাজির ভাগ, নাকি অন্য কিছু? এমন ব্যক্তির অধীনে কাজ করলে কি সম্মান থাকবে? থাকবে না জন্যই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১১. মাসিক মাত্র ২ হাজার টাকা বেতন দিয়ে আপনি মনে করেন আমরা আপনার গৃহপালিত ভৃত্য। আর এই দাম্ভিকতায় ৬৩ জেলার কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ জন ভাল রিপোর্টার কোন রিপোর্ট করে চ্যানেল আইতে পাঠালে আপনি এরমধ্যে যে রিপোর্টগুলো ভাল ও ব্যতিক্রমী, সেগুলো প্রচার করতে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন এবং নিজেই ছুটে যান সেই জেলায়। পরে ওই জেলার জেলা প্রতিনিধিকে দিয়ে সার্কিট হাউজে থাকার ব্যবস্থা করে নিয়ে সেই রিপোর্টারের সেই রিপোর্টটি তারই সামনে নিজে তৈরী করেন। পরে ওই জেলায় আরো ২/১ দিন থেকে প্রতিনিধির খরচে ৩ বেলা খেয়ে ওই জেলা ত্যাগ করেন। সুযোগ পেলে অবশ্য উপঢৌকন নিতেও ভুল করেন না। আমি এই সুযোগ অবশ্য আপনাকে কোনদিন দেইনি। আর আপনি তো এই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় খুব একটা আসেনও না। এলেও আমাকে না জানিয়ে রাজশাহী থেকে জনাব ফাত্তাহকে সাথে নিয়েই আসেন। একদিকে মাথায় টুপি দিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন, আর এমন অন্যায় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, এটা কি শোভনীয়?
উদাহরণ হিসেবে নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যেমন ধরুন, বৃক্ষ প্রেমিক কার্তিক প্রামানিকের কথা। যিনি আমার সৃষ্টি। অথচ ওই দূর্লভ ব্যক্তিকে যখন কৃষি পদক দেয়া হল, তখন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আমাকে ১ সেকেণ্ডের জন্যও স্মরণ করা হয়নি কিংবা কোন কৃতিত্বও দেয়া হয়নি। বরং একজন অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির মতো ঢাকা শহরের বিভিন্ন মোড়ে কার্তিক প্রামানিকের সাথে নিজের ছবি যুক্ত করে বিলবোর্ড ঝুলিয়ে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিজে গ্রহণ করলেন। এমন স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ মানুষের সাথে কি কাজ করা যায়? আর যায় না জন্যই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১২. অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, ভাড়া করা অফিসে তো বটেই, নতুন অট্টালিকায় উঠে আপনি নিজেসহ পিয়ন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য খাবারের ক্যান্টিন বানিয়েছেন। অথচ আমরা যাঁরা ৬৩ জেলার জেলা প্রতিনিধি তাদের জন্য কি ওই ক্যান্টিনে কোন সুযোগ রাখা হয়েছে? না, হয়নি। আমরা যাঁরা যে কোন মাসে একবার অথবা তিন মাসে দুবার রিপোর্ট নিয়ে সেই রিপোর্ট বানানোর জন্য ওই ভবনে যাই, তাঁরা কোন খাবার সুযোগ পাইনা। পাইনা এ কারণেই যে, ওই ভবনের আশেপাশে যেমন কোন হোটেল নেই, তেমনি ক্যান্টিনতো আমাদের জন্য নিষিদ্ধই। অতএব, দূপুরের খাবার না খেয়েই রিপোর্ট তৈরী করে আসি, আর সেই রিপোর্ট বিক্রি করে আপনারা গড়েন অট্টালিকা। এও শুনেছি, পিয়ন থেকে শুরু করে যারা ওই ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার খান, তারা প্রত্যেকে আপনার নির্দেশে হাত দিয়ে ভাত না খেয়ে চামুচ দিয়ে টুং টাং শব্দ বাজিয়ে খাবার খেতে বাধ্য হন। এটা কি মিঃ সিরাজ? আপনি একদিকে করবেন কৃষি বিপ্লব, আর অন্যদিকে বাঙালীকে বিলেতি বাবুদের মতো চামুচ দিয়ে ভাত খাওয়াতে বাধ্য করবেন, এটা কি স্ববিরোধী কর্মকান্ড নয়? এমন স্বৈরাচার ব্যক্তির অধীনে কি কাজ করা যায়? আর যায় না জন্যই স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১৩.কুষ্টিয়া জেলা থেকে আগত আপনার প্রিয়ভাজন (পর্দার পেছনে আপনার কথিত ডান হাত) যে চ্যানেল আই ভবন অলিখিতভাবে নিজের দখলে নিয়ে পরিবারতন্ত্রে পরিণত করেছেন, তা কি জানেন? হয়তোবা জানেনও। তারপরও বলবো, সাবধান! তার উপর পুরো ভর না করে নিজের কাজ নিজেই করার চেষ্টা করুন। তা না হলে একদিন দেখবেন, আপনার বার্তা প্রধানের এই পদটি ছিনতাই হয়ে গেছে। অথবা অন্য কোন নতুন চ্যানেলে (নিজে টিভি চ্যানেল খোলার স্বপ্নও দ্যাখেন) আপনার স্থানে তিনি বসেছেন এবং একই ধরনের অনুষ্ঠান তৈরী করছেন। তখন আপনি হয়তো সবার সামনে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন, আর অন্তর জ্বালায় জ্বলবেন একান্ত গোপনে।
১৪.দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চ্যানেল আই আজ একটি প্রতিষ্ঠিত চ্যানেল। এই চ্যানেলের উপার্জন যদি যথেষ্ট না হতো, তাহলে কিছুটা কম বেতনে হলেও হয়তো কাজ করা যেতো কিন্তু এটাতো মোটেও সঠিক নয়। নতুন নতুন চ্যানেলগুলো যেখানে জেলা প্রতিনিধিদের ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিচ্ছে, সেখানে ‘চ্যানেল আই দেবে না কেন? আর দেবে না কারণেই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১৫.আপনি কবার হজ্ব করেছেন মিঃ সিরাজ? ৩/৪ বার? পবিত্র হজ্ব করতে যাবার আগে প্রকৃত নিয়ম-কানুনগুলো কি জানেন? আমার ধারণা, জানেন না। আর জানেন না জন্যই আপনার অবগতির জন্য বলছি, পবিত্র ধর্মে ও বিশ্বের প্রচলিত আইনে আছে, শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাবার আগেই যেমন তাদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হয়, ঠিক তেমনি পবিত্র হজ্ব পালন করতে যাবার আগে সব ধরণের দেনা পরিশোধ করে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীর কাছে মাফ চেয়ে নিয়ে মনটা পবিত্র করে তারপর হজ্বে যেতে হয়। অথচ আপনি কি ৬৩ জেলার জেলা প্রতিনিধিদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক পরিশোধ করে পবিত্র হজ্ব পালন করেছেন? অবশ্য এ কথাও ঠিক, আপনার নামের আগে ‘গণমাধ্যম ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জুড়ে নিলেও ‘আলহাজ্ব উপাধিটি যুক্ত করে নেন নি। কারণ আপনি নিজেও জানেন, আমাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক না দেয়ায় আপনার হজ্ব পালন হয়নি। আর হয়নি জন্যই বিবেকের দংশনে এমন উপাধি যুক্ত করে নেন নি। এমন ব্যক্তির অধীনে কি কাজ করা যায়? আর যায়না জন্যই অনেক বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১৬.আমাদের বেতন যখন দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, তখন আপনার আশির্বাদপুষ্ট মফস্বল জেলা থেকে আপনার দপ্তরে যোগ দেয়া সেই সাংবাদিক বন্ধুটির বেতন ছিল ৪ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বেতন যদি ৬০ হাজার টাকা হয়, তাহলে আমাদের বেতন বাড়ানোর ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য কেন মিঃ সিরাজ? এই বৈষম্যের কারণেই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১৭. আরো বহু কিছু উল্লেখ করার বিষয় থাকলেও লেখা আর না বাড়ানোর স্বার্থেই সবশেষে একটি প্রসঙ্গ উপস্থাপন করেই পদত্যাগপত্র শেষ করছি। আর তা হলো, চ্যানেল আই-এর ৭ জন সম্মানিত মালিকের মধ্যে আপনি হচ্ছেন সপ্তম জন। তারপরও আবার বার্তা প্রধান। আর এই বার্তা প্রধান হিসেবে আপনার নিশ্চয় জানার কথা, সংবাদপত্রে যাঁরা কাজ করেন, বিশেষ করে সাংবাদিকেরা বেতন-ভাতা পাওয়ার অধিকারী ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী। দেশে এখন কততম ওয়েজ বোর্ডের বাস্তবায়ন চলছে, তা কি জানেন? শেষ ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী একজন জুনিয়র রিপোর্টারের বেতন কতো? চ্যানেল আই থেকে পদত্যাগ করলেও সর্বকনিষ্ঠ একজন সাংবাদিক হিসেবে গত ১০ বছরের হিসেব যে কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করে নেয়া হবে না কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিজ্ঞ আদালতে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে না, তা না ভাবার কোন কারণ নেই।
আপনার অহংকারী মানসিকতা পবিত্র হোক, আমাদের মতো অবহেলিত সাংবাদিক শ্রমিকদের সম্মান, মূল্যায়ন ও বেতন বৃদ্ধি করতে আপনার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের অর্থ ফাঁকি না দেয়ার সৎ চিন্তা আপনার হৃদয়ে জাগ্রত হোক, এমন প্রত্যাশা থাকলো মহান আল্লহতাআলার উপর। একই সাথে এই পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে ধন্য করবেন- এমন দাবীও জানালাম বিনীতভাবে। ধন্যবাদান্তে, সৈয়দ নাজাত হোসেন ‘সৈয়দ বাড়ী’ ৭৮/২, বালুবাগান চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৬৩০০ ০১৭১১-০৬৬২৬০ ই-মেইলঃ nazat260@gm ail.com সদয় অবগতির জন্য অনুলিপি প্রেরণ করা হলোঃ ১. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২. সভাপতি, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, ঢাকা। ৩. মাননীয় তথ্যমন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা। ৪. সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা। ৫. চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, ঢাকা। ৬.চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, ঢাকা। ৭. চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, ঢাকা। ৮.চেয়ারম্যান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ঢাকা। ৯.প্রেস সেক্রেটারী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,ঢাকা। ১০.ফরিদুর রেজা সাগর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা। ১১.আব্দুর রশিদ মজুমদার, পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা। ১২. আব্দুল মুকিত মজুমদার বাবু, পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা। ১৩. জহির উদ্দীন মাহমুদ মামুন, পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা। ১৪.আব্দুল আল-মুক্তাদির, পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা। ১৫. মোঃ রবিউল ইসলাম, পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা। ১৬. জেনারেল ম্যানেজার, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা। ১৭. অফিস কপি। বরাবর তারিখঃ ১৯ জুন ২০১১ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,ঢাকা। বিষয়ঃ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্তৃক মফস্বল সংবাদ কর্মীদের নিষ্পেষণ ও নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরা প্রসঙ্গে। জনাব, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার মিডিয়ার অবাধ স্বাধীনতায় যখন আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী, তখন এই স্বাধীনতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ করে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কিছু মালিক ঢাকা ছাড়া ৬৩ জেলার অবহেলিত সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এবং বঞ্চিত করে এনজিও সংস্থার মতো কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছেন। গত ১০ বছরে আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ‘চ্যানেল আই-এর একজন ‘জেলা প্রতিনিধি হিসেবে যে নিষ্পেষণ, নিপীড়ণ ও আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছি, ঠিক একইভাবে সারাদেশের সাংবাদিকদেরও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সে কারণে এই প্রতিষ্ঠান থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছি এবং সংযুক্ত পদত্যাগপত্রটি দয়া করে পড়ার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করছি।এটি পড়লে বোঝা যাবে, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিক নামধারী এইসব ব্যক্তিরা সরকারসহ সাধারণ মানুষের সাথে কি ধরণের আচরণ করছেন। বিনীত, সৈয়দ নাজাত হোসেন ‘সৈয়দ বাড়ী’ ৭৮/২, বালুবাগান চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৬৩০০ ০১৭১১-০৬৬২৬০ ই-মেইলঃ nazat260@gm ail.com সংযুক্তিঃ চ্যানেল আই থেকে ব্যাখ্যাসহ পদত্যাগের অনুলিপি।

Saturday, November 11, 2017

শেখ মুজিবের ছাত্রজীবন

আদর্শ ও দেশপ্রেমের প্রতিকৃতি।

  • শেখ মুজিবের ছাত্রজীবন : আদর্শ ও দেশপ্রেমের প্রতিকৃতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলার স্বাধীনতা ও বাঙালির জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠা। শৈশব কৈশোর থেকে তিনি এই আদর্শ নিয়েই বড় হয়ে ওঠেন। নিজেই নিজেকে প্রস্তুত করে তোলেন। তাঁর এই চারিত্রিক দৃঢ়তার পেছনে ছিল গভীর অধ্যয়ন, জানা-চেনা-শোনা ও দেখার গভীর অন্তর্দৃষ্টি। তিনি হৃদয়ের আবেগকে যথেষ্টভাবে ধারণ করতে সমর্থ হন। এর পেছনে ছিল মানুষকে ভালোবাসা ও সাহায্য করার জন্য তাঁর দরদী মন। এই শিক্ষাটা তিনি অর্জন করেন তাঁর পরিবারের মানুষদের দেখে, তাঁর গৃহশিক্ষকের কাছে এবং দারিদ্র অভাবগ্রস্থ গ্রামের মানুষকে দেখে। তাঁর হৃদয়ে যা কিছু ছাপ রেখেছে বা প্রভাব ফেলেছে সেটা তিনি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। এই ক্ষমতা অল্প বয়স থেকেই তাঁর আয়ত্তে ছিল। তাঁকে চিন্তাচ্ছন্ন করে তুলতো, তাঁকে আবেগতাড়িত করতো। তাঁর জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর গ্রাম টুঙ্গিপাড়ার মানুষের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এই ছোট্ট অনুন্নত গ্রাম ও মানুষের মধ্যে তিনি লক্ষাধিক গ্রাম ও কয়েক কোটি মানুষকেও দেখেছেন। আর সেজন্যই বাঙালি জাতির ভাগ্যকে তিনি জয় করতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনের প্রতি তাকিয়ে দেখার সুযোগ পান নি। জেল-জুলুম, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, শাসকগোষ্টীর অত্যাচার– সবকিছু সহ্য করেছেন। কিন্তু বাংলার মানুষের সঙ্গে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল বাংলার মানুষের মুক্তি। বাঙালি উন্নত জীবনের অধিকারী হোক। বিশ্বে মাথা উচু করে দাঁড়াক। বাঙালি জাতিসত্তাকে প্রতিষ্ঠা করুক। একজন মহান নেতা হবার সবকটি গুণই আমরা তার মধ্যে খুঁজে পাই। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবের জন্ম হয়। মা-বাবার চোখের মণি, ভাই-বোনের আদর ভালোবাসা, আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশি সকলের কাছেই ছিল তার সমাদর। গ্রামের মাটি-আলো-বাতাসের স্পর্শ নিয়ে প্রকৃতির শান্ত শীতল সবুজ ছবিটি দেখে তিনি বড় হয়ে উঠলেন।
    গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করেন। বাড়িতে লেখাপড়ার জন্য শিক্ষক, মৌলভী ও পণ্ডিত ছিলেন। গ্রাম থেকে গোপালগঞ্জ শহরে এসে মিশন স্কুলে ভর্তি হন। পিতা ছিলেন গোপালগঞ্জ দেওয়ানী কোর্টের সেরেস্তাদার। স্কুল ছাত্রজীবনেই তাঁর চোখে বেরিবেরি রোগ হওয়ায় কলকাতায় গিয়ে ডা. টি. আহমদের কাছে অস্ত্রপচার করতে হয়। দুই বছর লেখাপড়া বন্ধ ছিল। এ সময়টায় তিনি ঘুরে বেড়াতেন, সভায় গিয়ে বক্তৃতা শুনতেন, গৃহশিক্ষকের কাছে অনেক কথা কাহিনী ও খবরাখবর শুনতেন। সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবার স্কুলে ভর্তি হন, খেলাধুলায়ও মনোযোগী হন। ফুটবল ছিল প্রিয়। স্কুলের দলের হয়ে খেলতেন। লেখাপড়া করতেন ঠিক মত, কেননা তাঁর মা-বাবার প্রচন্ড উৎসাহ ছিল এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল, শাসনও ছিল। তাঁর গৃহশিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ ছিলেন একজন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কর্মী যিনি আত্মগোপন করতে তাদের বাসায় আশ্রয় নেন। সেই শিক্ষকই শেখ মুজিবের জীবনকে আলোকিত করার প্রথম প্রদীপটি জ্বালান। তিনি তাঁকে ইতিহাসের শাসকদের গল্প শোনান। বিপ্লব-বিদ্রোহের কাহিনী শোনান। বাংলার ইতিহাস কিশোর মুজিবের কাছে ছিল এক আদর্শময় পাঠ। বাঙালির কৃতিত্ব, শিল্প–সাহিত্য-সংস্কৃতির জ্ঞানও তিনি ধীরে ধীরে গ্রহণ করেন। এই শিক্ষা গ্রহণ করার পাশাপাশি সেই সময়ের বৃটিশ শাসকদের শাসন ও শোষণ, গান্ধিজীর আন্দোলন, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক, রাজনৈতিক আন্দোলন, সামাজিক সমস্যাবলী, বন্যা-দুর্ভিক্ষ, খাদ্যাভাব – সবই তিনি তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। স্কুল ছাত্র জীবনেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যারা রাজনীতি করতেন তাদের খুব কাছাকাছি চলে যান। ঐ সময়ে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক ও মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সফরে এলে তিনি তাঁদের সামনে গিয়ে স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ার অভিযোগ তুলে ধরেন এবং মেরামতের দাবি জানান। তাঁর কথা বলার ভঙ্গি দেখে দুই নেতাই মুগ্ধ হন। সোহরাওয়ার্দী তাঁকে কাছে ডেকে কথা বলেন এবং এলাকার রাজনৈতিক খবরাখবর নেন। তিনি ঠিকানা দিয়ে চিঠি লিখতেও বলেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে সেই প্রথম সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা আজীবন ছিল। সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক আদর্শ শিষ্য হিসেবে শেখ মুজিব গড়ে উঠতে থাকেন। সেই সফরে সম্বর্ধনা জানাতে একটি কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে সেই কমিটির একটি গোলমালের ঘটনায় শেখ মুজিবসহ চার পাঁচজনকে আসামী করে বিরোধীরা থানায় একটি মামলা করে। গোপালগঞ্জ থানা হাজতে সাতদিন বন্দি থেকে জামিনে মুক্তিলাভ করেন। পরবর্তীতে ১৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিলে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
    সেই তাঁর প্রথম কারাজীবন এবং এটাও তাঁর জীবনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স পাশ করে শেখ মুজিব কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। বৃটিশ শাসিত দুই বাংলা একত্রে বাংলা বা বেঙ্গল হিসেবে পরিচিত ছিল। বাংলার মেধাবী, মননশীল ছাত্ররা ইসলামিয়া কলেজে লেখাপড়া করতো এবং বেকার হোস্টেলে থাকতো। ১৯২৬ সালে ইসলামিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে এর নামকরণ হয় সেন্ট্রাল কলকাতা কলেজ। ১৯৬০ সালে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নামে রাখা হয়। বর্তমানে মাওলানা আজাদ কলেজ নামে পরিচিত। শেখ মুজিব এখান থেকে ১৯৪৪ সালে আই.এ. এবং ১৯৪৭ সালে বি.এ. পাশ করেন। কলেজের পাশের রাস্তায় তালতলা থানার কাছেই বেকার হোস্টেল। তিনতলা বিরাট ভবন। শেখ মুজিব তিনতলার বাঁদিকের সামনের সারির কোনায় ২৪নং কক্ষে থাকতেন। ছোট্ট কক্ষ, কোন ফ্যান ছিল না তখন। একটি ছোট্ট খাট। পাশেই কাঠের তৈরি পড়ার টেবিল ও চেয়ার। একটি ছোট্ট আলমারীও আছে। বর্তমানে এটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ নামে পরিচিত। তাঁর ছবি ও তাঁর সম্পর্কিত লেখা বইয়ের একটি আলমারিও আছে। পাশের ২৫ নম্বর কক্ষটিও এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য রাখা হয়েছে। দরোজার পাশে দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনীও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এই দুটি কক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর সঙ্গীসাথীরাও থাকতেন। সারাদেশ থেকে তাঁর ছাত্র রাজনীতির কর্মী, ভক্ত ও অনুরাগীরা এসে দেখা করতো এখানেই। অনেক সভা করেছেন হোস্টেলে। হোস্টেল সুপার ছিলেন অধ্যাপক সাঈদুর রহমান। ছাত্র-কর্মীদের থাকার জন্য শেখ মুজিব খালি রুম বা বড় হলঘর চাইলেই তিনি কখনও না করতেন না। শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর একটা আলাদা স্নেহ-ভালোবাসা ছিল। ইসলামিয়া কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন ড. এইচ. আর. জুবিরী।
    শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর ছিল অপার স্নেহ। বিশেষ করে বি.এ. পরীক্ষায় বসার জন্য তিনি তাঁকে সবরকম সহযোগিতা করেছিলেন। কেননা দাঙ্গা-হাঙ্গামা, পুনর্বাসন ইত্যাদি কর্মকান্ডে শেখ মুজিব তখন ব্যস্ত থাকতেন। মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। একদিকে ছাত্রনেতা হিসেবে বলিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন, অপরদিকে মুসলিম লীগের ড্রইংরুম রাজনীতিকে সাধারণের মাঝে নিয়ে আসার কাজে তিনি সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের যোগ্য শিষ্য ছিলেন। বেকার হোস্টেলের ছাত্র সংসদের নেতৃত্বও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং একবার সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। শিক্ষক ও ছাত্র সকলের প্রিয় ছিলেন শেখ মুজিব। তাঁর আদর্শ, সাহস ও চিন্তা-ভাবনার প্রতি সকলের শ্রদ্ধা ছিল। স্কুল ছাত্রজীবন থেকেই শেখ মুজিব দেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে মুসলিম লীগের ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সিরাজগঞ্জে প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সম্মেলনে যোগদান করে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ ভারতের বড় বড় নেতৃবৃন্দ যোগদান করেন। এছাড়াও দিল্লীতে ভারতীয় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্মেলনে তিনি দুইবার যোগদান করেন।
    সেখানেও নেতাদের ভাষণ শুনে তিনি অনুপ্রাণিত হন। কলকাতায় ছাত্রাবস্থায় তিনি দাঙ্গা দেখেছেন ও রুখেছেন। ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তাঁর ভূমিকা ছিল। ছাত্রজীবন থেকেই দেশপ্রেম ও দেশের জন্য কাজ করা তাঁর স্বভাবের অংশ হয়ে ওঠে। ছাত্রজীবনে তাঁর কর্মকাণ্ড, বিচক্ষণতা ও ভাষণ শুনে সবাই আকৃষ্ট হতো। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে শেখ মুজিব ঢাকায় এসে ১৪০নং মোগলটুলীর ‘কর্মী-ক্যাম্পে’ ওঠেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং সলিমুল্লাহ হলে মাঝে মাঝে থাকতেন।
    ঢাকায় এসে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং মুসলিম ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাচারিতা ও বাংলা বিরোধী ভূমিকার জন্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন। তিনি পূর্ব বাংলা মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন। যুবলীগেরও একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। খাজা নাজিমুদ্দিনের বাংলাভাষাবিরোধী ভূমিকা এবং উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার হুমকির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ যখন গর্জে ওঠে, তিনিও তাদের সঙ্গে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রতিবাদ ও হরতাল পালিত হলে শেখ মুজিবও সবার সঙ্গে গ্রেফতার হন। পরে পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে সবাইকে মুক্তি দেন। এরপর শেখ মুজিব কৃষকদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেন। এসময় উপাচার্যের বাড়ি ঘেরাও কালে তাঁকেও পুলিশ গ্রেফতার করে এবং অনেকগুলো মামলা দায়ের করে। কারাগারে থাকার সময় তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। জেল থেকে বের হয়ে এক ছাত্রসভায় বক্তৃতা দিয়ে তিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেন এবং জাতীয় রাজনীতিতে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে বহিস্কার করা হয়েছিল। জেলে থাকাকালে সরকার তাঁকে জরিমানা ও মুচলেকার প্রস্তাব দেয় এবং জানায় তিনি যদি রাজনীতি না করেন, তাহলে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে। তিনি সরকারি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন।

    কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে শেখ মুজিব টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে কিছুদিন অবস্থান করেন। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান তাঁকে লন্ডনে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়তে বলেন। কিন্তু শেখ মুজিব ততদিনে পাকিস্তানের শাসকদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে অনুধাবন করে ফেলেন। তিনি তাঁর প্রিয় বাংলার জনগণকে পাকিস্তানের শোষণের মধ্যে ফেলে রেখে লন্ডনে গিয়ে আর পড়তে চাইলেন না। তিনি রাজনীতি করার সদিচ্ছা প্রকাশ করে বাংলার মানুষের আদায়ের দাবিতে আবার ঢাকা চলে এলেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে। কিন্তু ঘরে বসে বই পড়ার অভ্যাস থাকায় তিনি একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। স্বচ্ছ মনের মানুষ ছিলেন, রাজনৈতিক চিন্তার দিক থেকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন, সাহসী, সৎ ও দৃঢ় চারিত্রিক আদর্শের অধিকারী ছিলেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আতঙ্ক ছিলেন একমাত্র শেখ মুজিব। মন্ত্রীত্বের লোভ, লাইসেন্সের টোপ এবং ব্যবসা-বানিজ্যের নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে তখন অনেক নেতাকে ক্রয় করা যেত। কিন্তু শেখ মুজিব তাঁর লক্ষ্যে দৃঢ় ছিলেন। জেল-জুলুম মামলা–ফাঁসির ভয় তাঁর মাথা নত করতে দেয়নি। বাংলার মানুষের মুক্তির দাবিতে, অধিকার আদায়ে, শোষণের বিরুদ্ধে তিনিই ছিলেন সোচ্চার প্রতিবাদী। তাঁর বজ্রকন্ঠ পাকিস্তানের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। দেশ ও মানুষকে তিনি তাঁর হৃদয়ের আধেয় করে একজন আত্মত্যাগী দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন। ছাত্রজীবন থেকে যে শিক্ষা ও দীক্ষা তাঁর জীবনকে আলোকিত করে তোলে, তার শিখা চিরন্তন করে রেখে গেছেন তিনি।

Friday, November 10, 2017

উত্তর চাই দেশবাসীর নিকট

https://liberationwar1971.blogspot.com/


মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ডঃ আব্দুস সোবহান গোলাপ তার বিজনেস কার্ডে লিখেছেন তিনি চাদপাড়া ও ব্যারাকপুরের মুক্তিযোদ্ধা। আমিও চাদপাড়া ও ব্যারাকপুরের মুক্তিযোদ্ধা। ডঃ গোলাপ ক্ষমতায় বলে স্বীকৃতি পাবে আর আমি ক্ষমতা নেই বলে মন্ত্রীর অপমান সহ্য করবো? তাতো হয় না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? এক মায়ের পেটে হিন্দু মুসলিমের জন্ম হয় না। হয় দুইজনই হিন্দু নয়তো দুইজনই মুসলমান। এ প্রশ্ন আ ক ম মোজাম্মেল হককে করেছিলাম। সে মালদ্বীপে বলে গিয়েছে যে গোলাপ মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। তাহলে সে মুক্তিযোদ্ধার সনদ কোথায় পেল? মন্ত্রী কোন উত্তর দেয়নি।

Tuesday, May 23, 2017

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

SUPPORT AWAMI LEAGUE, VOTE NOUKA ONCE AGAIN
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি বিশেষ্য বিশেষন দিয়ে তোষামোদি করতে জানিনা। তাই সরাসরি আমার কিছু না বলা কথা এবং কিছু হতভাগা মুক্তিযোদ্ধাদের করুন ইতিহাস আপনার সদয় অবগতির জন্য মিডিয়ার সাহায্য নিতে বাধ্য হলাম।
আপা, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুজিবনগরে প্রশিক্ষণ নেয়া যোদ্ধা।
  স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ২রা মার্চ জাতিরজনক বংগবন্ধু/বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজুদ্দিন আহমেদ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই ১০ মিনিটের নির্দেশে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চাকুরী প্রদান করেছিলেন। ৭ দিন কি ৮ দিন পায়ে হেটে না খেয়ে মুজিবনগরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নেশায়।

এ নেশা সাড়ে সাত কোটি মানুষের রক্তে মাংসে অস্তিত্বে মগজে সেলের মত বিধেছিল ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ "পশ্চিমা হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে হবে" জাতিরজনকের এই উদাত্ত আহবানে সারা দেয়া কী ভুল সিদ্ধান্ত ছিল? তাই আমি মুক্তিযোদ্ধা। নামবিহীন অস্তিত্ববিহীন মুক্তিযোদ্ধা! নাম বদলে দিলাম। মোঃ মোকতেল হোসেন থেকে নাম বদলে হয়ে গেলাম মোকতেল হোসেন মুক্তি।
পরবর্তীতে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু ১৩ই এপ্রিল ১৯৭২ সালে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হলে মাদারীপুরের কৃতি সন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক খাদ্যমন্ত্রী প্রয়াত ফনি ভূষন মজুমদারের অনুস্বাক্ষরে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবীল থেকে এক হাজার টাকার অনুমোদন (মাদারীপুর মহকুমা প্রশাসক অফিসে) এবং ৩ বান ঢেউ টিন প্রদান করেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের রেকর্ডে একজন মুক্তিযোদ্ধার কোটায় আমার চাকুরী হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের সচিবালয়ে আমিই ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ছিলাম। আমার ডিউটি ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার ফুফা, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি, সাবেক চীপ হুইপ আলহাজ্ব হাসনাত আব্দুল্লাহ সেরনিয়াবাত এর গর্বিত পিতা, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি ভাইয়ের শ্বশুর, সাংসদ ব্যারিষ্ঠার তাপসের নানা সাবেক কৃষক লীগের সভাপতি ভুমি মন্ত্রী ও পরবর্তীতে পানি সম্পদ মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায়।
ইতিহাসের ঘৃণ্য কালো অধ্যায় ১৫ঈ আগস্টের মধ্যযূগীয় বর্বর হত্যাকান্ডের লাশ দেখে আমি পাগল হয়ে যাই। পিজি হাসপাতালে আমার ৩ মাস চিকিতসা চলে এবং সে তিন মাসের বেতন ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তন করে। এ কথা সকলেই জানেন।
আমি ভারতের প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। আমার ঘরের সব কাগজপত্র আমার ভাইদের শিক্ষার সনদ, জমির দলিল দস্তাফেজ সমূহ সব মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ছিড়ে ফেলি। আমার পরিবারের সব আমি ধংস করে ফেলেছিলাম। ভুমি মন্ত্রনালয় তার প্রমান।
আমি মন্ত্রীকে এসব কথা বলাতে আমাকে অপমান করতে পারেন না। আমি প্রবাসে থাকি। আমাকে আবেদনের সুযোগ না দিয়ে অপমান করার অধিকার মন্ত্রীর নাই। তিনি আমার দরখাস্ত গ্রহন করা ও না করার অধিকার রাখেন কিন্তু মেজর জেনারেল সুবিদ আলীর নির্দেশে  আমাকে অপমান করতে পারেন না। তিনি আমার আবেদনে লিখেছেন
“যেহেতু আবেদনকারী বহুবার দেশে এসেছিলেন এবং আবেদন করেন নি তাই তার আবেদন গ্রহন করা গেল না”
তিনি মেজর জেনারেল সুবিদ আলীর শিখানো কথা মত বললেনঃ ৪৫ বছর পরে মুক্তিযোদ্ধা হতে এসেছে। বের করে দেন”।
আমি মুক্তিযোদ্ধাই নই, একজন সক্রিয় আওয়ামি যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া আমার জীবনে অন্য কোন বিষয় কাজ করেনি এবং এ মুক্তিযুদ্ধ বংগবন্ধ ও আওয়ামী লীগই আমার ধ্যান ধারনা চিন্তা চেতনা আদর্শ এ কথা প্রমান করে আমার ৬০ হাজার প্রায় লীফলেটস, ব্যানার ও পোষ্টার এশিয়ায় ইন্টারনেট চালু হবার পর থেকেই কার বিনা প্ররোচনায় করে এসেছি। শুধু তাই নয় আমি ২০০ ওয়েব সাইট ও ব্লগ মেইনটেইন করি যা’শুধু যুদ্ধাপরাধী মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সংক্রান্ত। এ সকল ছবি ও ব্লগ/ওয়েবসাইটগুলোই প্রমান করে যে আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রীতিমত একজন বদ্ধ উন্মাদসম গবেষক।
Just write my name on the google search engine where you’ll get real Identity of mine “write Moktel Hossain Mukthi or muktimusician.
এ ছাড়াও আমি একজন একনিষ্ঠ অনলাইন আওয়ামী যোদ্ধা। মালদ্বীপের বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, মালদ্বীপের মাটিতে আমিই সর্ব প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু এবং পাকিস্তানের ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য জনসভায় বক্তৃতা প্রদান করে পাকিস্তান হাই কমিশনের মামলা খাওয়া একজন মালদ্বীপ সরকারের শিক্ষক।
মন্ত্রী মহোদয় এ সব পরিচয় জানার পরেও বলেন নি যে আপনি বসেন বা কিছু বরং তাঁর আচার ব্যবহার এতই রুঢ় ছিল যা’ শিবির বা জামাতের কারো সাথে করছেন বলে অনুমেয়। আমার সাথে ভদ্র ভাষায় কথাও বলেন নি। এক পর্যায়ে জেনারেল সুবিদ আলীর কথায় তিনি আমাকে ঘাড় ধরে তাঁর কক্ষ থেকে বেড় করে দেয়ার কথা বলেন এবং অতঃপর.........।।
তিনি মন্ত্রী না হলে হয়তো সেখানেই কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতো। আমি আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে চলে আসি। আমার সহযোদ্ধারা এখনো অনেকেই বেচে আছেন। ড: গোলাপ আমার সাথের একই ক্যাম্পের যোদ্ধা। আওয়ামি যোদ্ধা।  
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী সব সময় প্রচন্ড মিথ্যা কথা বলেন। যা' মিডিয়া ও বক্তৃতায় বলেন, বাস্তবের সাথে তার কোন মিল নেই; তিনি যা বলেন সব মিথ্যা কথা মিথ্যা তথ্য। এখনো বহু আসল মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত করতে পারেনি অথচ তিনি বক্তৃতায় ঘোষনা করলেন সকল জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা রেকর্ড করা হবে। আসল অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামই সংগ্রহ করতে পারেন নি-তিনি কিভাবে এ ঘোষনা প্রদান করেন?   
তার দেয়া সব তথ্য জাতিকে বিভক্ত করছে; মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কলঙ্কিত হচ্ছে। নতুন তালিকা প্রণয়নের নামে এগুলো প্রতারণা। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী মিথ্যাচার করছেন। মিডিয়া, দেশবাসী এমন কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রতারণা করছেন । দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজেলা ও জেলাসমূহে যে দুর্নীতি চলছে, যে সনদ ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের নামে ব্যবসা বাণিজ্য শুরু হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের বিগত বছরগুলোর সকল সফলতা এমন কি মহান মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের যে অবদান সব মলিন হয়ে যাবে এই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীদের মত স্বজনপ্রীতি দুর্নীতি গ্রস্থ নেতা/কমান্ডারদের কারনে।
কারন আপনি আদর্শিক কারনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষন ও মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করছেন।  সমস্ত মন্ত্রী এম পি দের তৃনমূলের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। ক্ষমতা ও অর্থ সম্পদ শালী মধ্য শ্রেণীর নেতা যার মধ্যে অর্ধেকই প্রায় জামাত শিবির ও বি এন পি, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে, হাত মিলিয়ে আমার মত পাগল ছাগল নিবেদিত ত্যাগি সৎ নিষ্ঠাবান অভিজ্ঞ উচিত কথাবলার প্রকৃত মুক্তিসেনাদের এভাবেই তারা অপমান তাচ্ছিল্য করে দূরে সরিয়ে রাখে। যে কারনে ছাত্রলীগের ছেলেদের সেনাবাহিনী নৌ বাহিনী বিমান বাহিনী পুলিশ বিজিবি ও অন্যান্য সরকারী ভালো পদে চাকুরী হয় না।
কারন ওরা ত টাকা দিতে পারবে না। দলীয় ছাত্র লীগের ছেলেদের নিকট টাকা চাইতেও পারে না; যদি আবার নেত্রীকে বলে দেয় বা জানিয়ে দেয়। তাই গোপনে আওয়ামী লীগের নেত্রীর বিশ্বাসী নেতাগন গোপনে চাকুরী প্রদান করে, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তির সুপারিশ ও তদবীর করে জামাত বি এন পির ছেলে মেয়েদের । কারন টাকা পাওয়া যাবে।
উত্তরা ও এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় আমার বাস। আমার জানা মতে ঠিক আমারই মত ত্যাগি জীবনবাজী রেখে নৌকার জন্য ভোট সংগ্রহ কারীর একটি মেয়েকে বঙ্গ মাতা স্কুলে ভর্তির জন্য কি না করেছে? মায়া ভাই পর্যন্ত বিষয়টি জানতেন। সে মেয়েটি সুযোগ পায়নি; দেখা গেছে-ঢাকা এয়ারপোর্ট ও বিমানে চাকুরীরত জামাত বি এন পির ছেলে মেয়েরা অজানা রহস্যের কারনে সবাই সুযোগ পেয়ে গিয়েছে।
এর নাম স্বাধীনতা ? মুক্তিযুদ্ধ ? আওয়ামী লীগ ? এত সে বঙ্গবন্ধুর নৌকা ডুবানোর দুরদন্ত শয়তানী মাঝি খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চাষী মাহবুবুল আলম, নূরুল ইসলাম, কে এম ওবায়দুর রহমান তাহের উদ্দিন ঠাকুরদের চেয়ে একটূ কম নয়। আমিই হলাম বাঙ্গালী জাতির মধ্যে সবচেয়ে কুলাঙ্গার। ধিক্রিত অবহেলিত লাঞ্ছিত মূর্খ বেয়াকুপ বেয়াক্কেল আহাম্মদ বোকা গাধা । না পারলাম প্রাণ খুলে হাসতে না পারলাম দুটি কন্যা সন্তানকে প্রাণ খুলে হাসতে। কি লাভ হল? এ স্বাধীনতায়? যে স্বাধীনতা আমার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেয় না; সে স্বাধীনতাকে আমি কেন স্বীকৃতি দেব? রাষ্ট্রই যদি আমাকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়, আমি কেন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবো? কেউ দেবে না। এটাই নিয়ম, এটাই লজিক। জানি আমি এতে হবো রাষ্ট্রদ্রোহী। তাও মন্দ কী? একটা কিছু ত হবো? আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ঘাড় ধরে বেড় করে দেয়?? এ স্বাধীনতার অর্থ কী? কেন পেলাম? কি আশায় স্বাধীন হলাম? কিসের নেশায় নৌকা নৌকা মুজিব মুজিব করে জীবনের শেষ অবস্থানটুকুকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে নির্বাসিত হলাম এই দ্বীপ রাজ্য মালদ্বীপে । ভুল কোথায়? ভুল তো আছেই হয়তো জানিনা জীবনের কোথায় কোন সিদ্ধান্তে বড় রকমের ভুল ছিল। তাই ভুলের মাশুল দিয়ে গেলাম ৬৫ বছর বয়সের মুক্তিযোদ্ধা মোকতেল হোসেন মুক্তি।


ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এর সমাধান চাই। এর একটি পরিস্কার ব্যাখ্যা চাই; সত্যের জয় হবে; তাই চাই; জাতিরজনকের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ ক্ষমতায় থেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের নিয়ে রঙ তামাশা করবে; মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণের নামে ব্যবসা করবে, এর জন্য যুদ্ধে যাইনি, এর জন্য ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী শহীদ হয়নি; এর জন্য ২ লক্ষ ৪০ হাজার মা বোনের ইজ্জত হারায়নি। আসল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাই করতে ব্যর্থ মোজাম্মেল হক।
এই মিথ্যাচারের জন্য আল্লাহ্‌ বিচার করবেন রোজ হাসরের দিন। মহান আল্লাহর বিচারে কারো হাত নেই। আল্লাহর উপরে কোন মন্ত্রী নেই; আল্লাহর উপরে বিচারক নেই; রোজ হাসরের থেকে শক্তিশালী ক্ষমতাবান কোন আদালত নেই। বহু আসল মুক্তিযোদ্ধা এখনো তালিকার বাইরে এবং এ সমস্যা আগামী ১০০ বছরেও কোন সরকার সমাধান করতে পারবে না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কথা রেকর্ড হবে ।
মন্ত্রী নিজেও জানে না যে উপজেলা জেলা গুলোতে এই তালিকা নিয়ে কি পরিমান টাকার ছাড়াছড়ি চলছে? কি পরিমান ব্যবসা করছে নব্য থানা কমান্ডারগণ। এমন কোন উপজেলা নেই যেখানে সত্যকারের মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়ে নাই এবং ভূয়া মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী মন্ত্রীর ক্ষমতা বলে নয়তো এম পির ক্ষমতা বলে অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষমতা বলে নতুন তালিকায় নাম লিখিয়েছে। এমন প্রমান আমার গ্রামে আমার ইউনিয়নে রয়েছে। আমি ত অন্যের ক্কথা শূনে এ সব লিখিনি ভাই।ফুরিয়ে যাচ্ছে ৭১ এর সোনার ছেলে মেয়েরা, বেচে থাকবে শুধু ৭১ এ জন্ম নেয়া নব্য মুক্তিযোদ্ধারা, যারা লক্ষ টাকায় মুক্তিযুদ্ধের সনদ কিনে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। আমরা মুজিবনগরে (ভারতে) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এর চেয়ে বড় পরিচয়ের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ডঃ আব্দুস সোবহান গোলাপ ভারতের চাদপাড়া এবং পরবর্তীতে ব্যারাকপুর মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং আমরাও একই সময়ে একই শিবিরে একই কমান্ডারের অধীন প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা। ডঃ আব্দুস সোবহান গোলাপের নাম যদি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তালিকায় থাকতে পারে, তবে আমাদের নাম থাকবে না কেন? শুধু আমরা নই, সারা বাংলাদেশে বহু অখ্যাত অপরিচিত অশিক্ষিত অজো পাড়া গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি। বহু মুক্তিযোদ্ধা ইতোমধ্যেই পরলোকগমন করেছেন, কোন স্বীকৃতি ও সুযোগ সুবিধা ভোগ না করেই তারা চলে গেছেন বাঙ্গালী জাতিকে মহান স্বাধীনতা প্রদান করে। তাদের নাম কে তালিকাভুক্ত করবে? কেন একটি সঠিক তদন্ত কমিটি কর্তৃক সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়নি? এ প্রশ্ন সরকার ও দেশবাসীর কাছে। আমরা মনে করি মহান মুক্তিযুদ্ধের নেত্রিত্বদানকারী দল হিসেবে জাতিরজনক বংগবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের এ মহান দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধাদের জীবদ্ধশায় সম্পন্ন করা উচিত। সবাই শেয়ার করুন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সত্যিকারে শ্রদ্ধা থাকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তির খোলা চিঠি
আমার সার্টিফিকেট দরকার নাই। কোন ভাতার দরকার নাই। আপনি মুসলমান দাবী করলে আমি কেন করবো না? আমিও তো  নামাজ পড়ি? মন্ত্রী আমাকে অপমান করতে পারে না। তার চেয়ে আওয়ামী লীগের জন্য আমার অবদান সেই ৬৯ থেকে অদ্যাবধি তিল পরিমান কম নয়; বঙ্গবন্ধু আমাকে চাকুরী দিয়েছিলেন সচিবালয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। অমুক্তিযোদ্ধা ভাতা পায় এবং তা আওয়ামী লীগের আমলে এবং আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর স্বাক্ষরে কেন? আমার কি ইচ্ছে করে না যে আমার সন্তান মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোক। আমার সন্তানের কি ইচ্ছে করে না, তার বাবা মুক্কতিযোদ্ধা এ কথা অন্য দশজনের নিকট বলে গৌরব বোধ করতে? মন্ত্রীর ইচ্ছে মত চলতে পারে না; এ সব তথ্য নেত্রীর জানা দরকার।
নিবেদক - মোকতেল হোসেন মুক্তি, কন্ঠশিল্পী মুক্তিযোদ্ধা,
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সময়৭১।
মালদ্বীপ আওয়ামী লীগ
বঙ্গবন্ধু পরিষদ, মালদ্বীপ শাখা
সাধারণ সম্পাদক
মালদ্বীপস্থ প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি এসোসিয়েশন
সুরকার গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক
সঙ্গীত শিক্ষক
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ।